উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
আরসার শীর্ষ কমান্ডারসহ গ্রেপ্তার ১০
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গ্রুপ আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি-আরসার তিন বিভাগীয় কমান্ডারকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এদিকে, পৃথক অভিযানে বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা থেকে তিন কেজি আফিমসহ এক মাদক কারবারি এবং কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুস্কুল থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রসহ ডাকাত দলের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল দুপুরে র্যাব-১৫-এর কক্সবাজার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান র্যাব-১৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। গ্রেপ্তার তিন আরসা কমান্ডার হলো- আরসার ওলামা বডির অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার মৌলভি হামিদ হোসেন ওরফে ডাক্তার হামিদ, অর্থ সমন্বয়ক আবু তৈয়ব ওরফে সোনা মিয়া ওরফে সোনালি এবং আরসার ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার ওসমান গনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যে র্যাব জানতে পারে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসার বেশ কয়েকজন কমান্ডার অবস্থান করছে। এরই সূত্র ধরে র্যাব-১৫-এর বেশ কয়েকটি টিম রবিবার মধ্য রাতে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ১৭ ও ৪নং ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরসার তিন বিভাগীয় কমান্ডারকে গ্রেপ্তার করে। তাদের আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র গুলি এবং বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তার এই তিনজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিশেষ করে রোহিঙ্গা হত্যা, অপহরণ, নাশকতা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহ, প্রতিবেশী দেশে গোয়েন্দা তথ্য পাচারসহ অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে বলে ব্রিফিংয়ে তিনি জানান। লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, আরসার গোয়েন্দা টিমের কমান্ডার ওসমান গণির তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইংরেজি ভাষায় বেশ দক্ষতা থাকায় সে আরসার তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ও দেখভাল করত। এই সুযোগে সে ক্যাম্পে পরিচালিত এনজিও ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য আরসার শীর্ষ নেতাদের সরবরাহ করত। পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতির খবরাখবর পৌঁছাত। তা ছাড়া বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি লক্ষ রাখত। কোনো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে গ্রুপের সদস্যরা মেসেজ দিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিত।’ তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম আরসার সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। ক্যাম্পের অধিকাংশ হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদকসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আরসার সন্ত্রাসীরা জড়িত।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব এ পর্যন্ত এই তিনজনসহ আরসার ৭৬ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কমান্ডার ও সাধারণ সশস্ত্র সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্য। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সামরিক কমান্ডার, গান গ্রুপ কমান্ডার, অর্থ সম্পাদক, আরসা প্রধান আতাউল্লাহর একান্ত সহকারী ও অর্থ সমন্বয়ক, মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান, ক্যাম্প কমান্ডার, ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান।
এদিকে, র্যাবের আরেকটি টিম রবিবার রাতে বান্দরবান-থানচি সড়কে তিন কেজি আফিমসহ অনারমা ত্রিপুরা নামে এক মাদক কারবারিকে আটক করে বলে র্যাব অধিনায়ক জানান। এ ছাড়া গতকাল ভোরে কক্সবাজার সদরের কস্তুরাঘাট নতুন ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ ডাকাত দলের ছয় সদস্যকে আটক করা হয়।
"