সোহেব আহমেদ

  ১৯ নভেম্বর, ২০২৩

শীতের পিঠার ধুম ফুটপাতে

দিনক্ষণের গণনায় শীতকাল না এলেও সারা দেশে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে আগেই। গ্রামাঞ্চলে খানিকটা শীত নামলেও রাজধানী ঢাকায় এখনো সেই রেশ নেই। তবে শীতের পরশ না থাকলে কী হবে, রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক কিংবা অলিগলির ফুটপাতগুলোতে মিলছে শীতের পিঠা। বিকেল হলেই চিতই, ভাপাসহ হরেক পিঠার পসরা সাজিয়ে বসছেন দোকানিরা। নানা পদের ভর্তায় ধোঁয়া ওঠা চিতই পিঠার স্বাদ নিতে ব্যস্ত পথচারী, আশপাশের মানুষ। আর পিঠা বিক্রি করে আয়ের পথ সুগম হচ্ছে কিছু মানুষের।

তেজগাঁও শিল্প এলাকায় সড়ক ও জনপথ ভবনের সামনের ফুটপাতে চিতই পিঠা বিক্রি করেন মোহাম্মদ নান্নু সরদার। তেজগাঁও বেগুনবাড়ীর বাসিন্দা নান্নু সরদার জানান, প্রতিদিন বিকেলে চিতই পিঠার সরঞ্জাম নিয়ে বসেন। সঙ্গে থাকে শুঁটকিভর্তা, কালোজিরা, ধনিয়া পাতা, সরিষাবাটা ভর্তা। কয়েক পদের ভর্তার সঙ্গে তার চিতই পিঠা ভালোই চলে। ডিম দিয়ে চিতই পিঠাও বিক্রি করেন তিনি।

নান্নু সরদার জানান, আশপাশের অফিসের মানুষ বিকেলে নাশতার জন্য নেমে অনেকেই ভর্তা দিয়ে পিঠা খান। তাই ফুটপাত হলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে তিনি নজর রাখেন। পিঠা বানিয়ে স্বচ্ছ কাচের বাক্সের মধ্যে রাখেন, যতে ধুলাবালি না লাগে। ভর্তাও রেখেছেন ঢাকনাওয়ালা বাটিতে।

প্রতিটি চিতই পিঠা ১০ টাকা এবং ডিম দিয়ে একেকটি পিঠা ৩০ টাকা রাখেন তিনি। তার কাজে সহায়তা করে ছেলে রোমান।

কেমন বিক্রি হয়, জানতে চাইলে এই দোকানি বলেন, প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি হয়। তাতে সব খরচ বাদ দিয়ে হাজারখানেক টাকা থাকে।

শুধু নান্নু সরদারই নন, রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায়, অলিগলিতে শীতের সময় এলে কয়েক হাজার মানুষ পিঠা বিক্রিতে নেমে পড়েন। শীতকালের বাইরে তাদের বেশির ভাগই ফুটপাতে ফল, তরকারি বিক্রি করেন। শীত এলে বিক্রি করেন পিঠা। অবশ্য অনেকে সারা বছরই পিঠা বিক্রি করেন নির্দিষ্ট স্পটে।

রাজধানীর চকবাজার, নিউমার্কেট, কাঁটাবন, কলাবাগান, কারওয়ান বাজার, রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, মহাখালী, গুলিস্তান, পল্টন, বেইলি রোড, বাংলামোটর, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পলাশির মোড়, চানখারপুল, ওয়ারিসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে, মোড়ে, ফুটপাতে, পাড়া-মহল্লায় শীতের পিঠা বিক্রি হতে দেখা যায়।

চিতই পিঠার পাশাপাশি ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা, কুসুমকলি, আমদেশা ও পুলি পিঠাসহ নানা পদের পিঠা বিক্রি শুরু হয়েছে সম্প্রতি।

রামপুরার ওয়াপদা রোডের জাহাজ বিল্ডিংয়ের মোড়ে সারা বছরই চিতই পিঠা বিক্রি করেন নাজমা বেগম। তিনি জানান, শুধু শীতকালই নয়, সারা বছরই প্রতিদিন দুপুরের পর পিঠা বিক্রি করেন তিনি। আশপাশের গলির মানুষজন লাইন দিয়ে তার পিঠা কেনেন। অনেকে ৮ থেকে ১০টা করে বাসায় নিয়ে যান, পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে খান।

প্রতিটি চিতই পিঠা ১০ টাকা করে বিক্রি করেন নাজমা। তিনি জানান, পিঠা তৈরির জন্য চালের গুঁড়াসহ আনুষঙ্গিক সব জিনিস জোগাড়ে তার স্বামী সহায়তা করেন। পিঠা বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে।

কাঁটাবন কনকর্ড টাওয়ারের সামনের ফুটপাতে পিঠা খেতে এসেছেন মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, গ্রামের বাড়িতে আগে শীতের সময় ঘরে প্রায় প্রতিদিনই পিঠা বানানো হতো। সেই সময় আর নেই। এখন পিঠার স্বাদ পেতে হলে ফুটপাতই ভরসা।

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় অনেক বছর ধরে পিঠা বিক্রি করেন নোয়াখালীর শফিকুল ইসলাম। স্টার হোটেলের সামনে পিঠা বিক্রি করেন তিনি। ছোট ছোট ছয়টি কড়াইতে চিতই পিঠা বানান শফিকুল। তাকে সহায়তা করে নিজের ছেলে। চিতই পিঠা ছাড়াও ভাপা ও মালপোয়া বিক্রি করেন তারা।

শফিকুল জানান, সারা বছর ভ্যানে ফল বিক্রি করেন। তবে শীত এলেই পিঠা বিক্রি করেন তিনি। চিতই পিঠার পাশাপাশি এখন মানুষ ভাপা, মালপোয়াও খেয়ে থাকে।

পলাশী মোড়ের পিঠা বিক্রেতা জামাল জানান, চিতই নয়, পাটিসাপটা ও মালপোয়া বিক্রি করেন তিনি। দামের বিষয়ে জানতে চাইলে জামাল বলেন, গত বছর প্রতিটি পিঠা ১০ টাকা করে বিক্রি করেছি। এবার সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় পিঠার দামও বাড়িয়ে নিচ্ছেন, প্রতিটি ২০ টাকা করে।

ফুটপাতের পিঠা বিক্রেতারা জানান, বেশিরভাগই মৌসুমি ব্যবসা হিসেবেই পিঠা বিক্রি করে থাকেন। শীতের তিন-চার মাস চলে পিঠার ব্যবসা। তারপর কেউ কেউ অন্য কাজে জড়িয়ে পড়েন। কেউ চলে যান গ্রামে পরিবারের কাছে, লেগে যান পুরোনো খামারের কাজে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close