আবদুর রউফ, ধামরাই (ঢাকা)
গানের রোজগারে চলে সংসার

জন্মের পর থেকেই দেখা হয়নি পৃথিবীর আলো। জন্মগত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবু মিয়া। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের আদর-যত্নে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা বাবুমিয়ার। তার বাবা-মায়ের চিন্তা ছিল চিরকাল তো ছেলের থাকতে পারবেন না। কীভাবে চলবে তার সংসার। এভাবে চিন্তায় চলে যায় দিনের পর দিন। ধীরে ধীরে বাবা-মায়ের আদর-যত্নে বড় হয়ে ওঠে বাবু মিয়া। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় একা চলা ফেরা করতে পারে না বাবু। চলতে গেলে লাগে সাথী। এদিকে বাবু মিয়ার কণ্ঠে মধুর সুর। এমন মধুর কণ্ঠে গান শুনে আকৃষ্ট হয় মানুষ। বাবু মিয়া ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের লাড়য়াকুন্ড গ্রামের মো. মিনহাজ উদ্দিনের ছেলে। মা-বাবা ভাই-বোন নিয়ে তাদের সংসার। বাবু ও মিজান দুই ভাই। ভাইদের মধ্যে বড় মিজান ছোট বাবু। এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবুর গান গেয়ে জোগাড় করা টাকায় সংসাদের সিংহবাগ খরচ চলে। বাবুর পরিবার কৃষিজীবী।
কী করবে বাবু মিয়া কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এ সময় বাবু মিয়ার গান শুনে ছুটে আসে ওস্তাদ ময়ছের আলী। তিনি বাবুকে বলেন, তুই গান শিখবি? কে আমাকে শেখাবে গান। তখন থেকে ময়ছের আলী বাবুকে তার কাছে নিয়ে শুরু করেন গান শিখানো। এমনি করে বাবু মিয়া হয়ে ওঠেন গায়ক। এরপর থেকে হারমনিয়াম, ঢোল নিয়ে শুরু করেন গান। বাবুর গান শুনে মানুষ খুশি হয়ে দেয় টাকা। এতে বাবুর গানের প্রতি আরো আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। পরে পেশা হিসেবে নিয়ে নেয় গানকে। এরপর বাবু সঙ্গে ঢুলি হিসেবে আমজাত মিয়াকে নিয়ে পথ চলতে শুরু করে। এর মধ্যে আবার কথা ঢুলি আমজাতের এক চোখ কানা। কিন্তু ঢুলি হিসেবে বেশ বাজাতে পারেন তিনি। তার ঢুলের বাজনায় গানের সুরকে করে তুলে আরো মধুর। তারা দুজন মিলে চলতে থাকে বিভিন্ন হাট-বাজারে চায়ের দোকানে থেকে শুরু করে গ্রামের আনাচে-কানাচে গান গেয়ে চলে তাদের সংসার।
গানের ফাঁকে কথা হয় বাবু মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, আমি ছোটকাল থেকে চোখে দেখি না। তবে আমার বাবা-মা আমাকে ভালোবাসা ও আদর দিয়ে বড় করেছেন। তাদের চিন্তা ছিল আমি বড় হয়ে কী করব। বাবা-মায়ের চিন্তা ও বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে এখন আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। আমি গান গেয়ে যে টাকা উপার্জন করি সেই টাকা দিয়ে চলে আমার সংসার। আমি গত ১৫ বছর আগে বিয়ে করেছি। আমার দুই ছেলেমেয়ে, আমার স্ত্রী ও আমার বাবা-মাকে নিয়েই আমার সংসার। আমার বড় ভাই আছে কিন্তু মা-বাবা সঙ্গে থাকে না। সে তার সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে আলাদা থাকে। আমার বাবার বয়স হয়েছে এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না। তাই আমি বিভিন্ন হাট-বাজার ও চায়ের দোকানে গান গেয়ে কোনো দিন ৫০০ আবার কোনো দিন ১০০০ টাকা পায় তাই দিয়ে বাবা-মা ও স্ত্রী সন্তান নিয়ে চলে সংসার।
এই বিষয়ে আমজাত বলেন, আমি ঢোল বাজায় আর বাবু গান গায়। আমার একটা চোখ নষ্ট, কিছু দেখি না, বাকি চোখ ভালো আছে। আমি ঢোল বাজাই আর বাবুকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাই। গান শুনে মানুষ খুশি হয়ে যা দেয় তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলে।
অন্ধ বাবু মিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ধামরাই উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. এস এম হাসান বলেন, সরকার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ভাতা চালু করেছে। বাবু মিয়া যদি প্রতিবন্ধী ভাতা না পেয়ে থাকে তাহলে বাবু মিয়াকে আমার কাছে আসতে বলবেন। আমি তাকে সরকারের দেওয়া একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিব। যেটা দিয়ে সে সারা জীবন টাকা পেতে থাকবে। আমরা সব সময় অসহায় লোকদের সরকার সমাজ সেবার মাধ্যমে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জীবন মান উন্ননয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সেই সুবাধে বিভিন্ন ভাতা চালু করেছে সরকার।
"