প্র্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
গাজার পার্লামেন্ট গুঁড়িয়ে দিল ইসরায়েল
* হামাস নেতার বাড়িতে বিমান হামলা * আল শিফা হাসপাতালে অভিযান অব্যাহত

গাজার পার্লামেন্ট গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজায় অবস্থিত হামাসের পার্লামেন্ট ভবনকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। গত বুধবার টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে এএফপি জানায়, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পার্লামেন্ট ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের দখলে নেওয়ার দাবি করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ শুরুর এক মাসের বেশি সময় পর মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) এমন দাবি করল তেলআবিব।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজার ক্ষমতাসীন হামাসের পার্লামেন্ট, সরকারি ভবন, পুলিশের সদর দপ্তর ও একটি প্রকৌশল ভবন দখল করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এই প্রকৌশল ভবনটি অস্ত্র উৎপাদন ও উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামাসের এ পার্লামেন্ট ভবনটি সপ্তম আর্মড ব্রিগেড ও গোলানি পদাতিক ব্রিগেড দখলে নেয়।
এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার বাড়িতে বিমান হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক মাধ্যম এক্স প্ল্যাটফরমে এক ঘোষণায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, তারা বুধবার রাতে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধানের বাড়িতে হামলা চালাতে জঙ্গি বিমান ব্যবহার করেছে। হানিয়ার বাড়িটি ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো হিসেবে ব্যবহৃত হতো’ বলে অভিযোগ করেছে আইডিএফ।
তারা বলেছে, হানিয়ার বাড়ি সন্ত্রাসী অবকাঠামো হিসেবে ব্যবহার করা হতো আর প্রায়ই সেটি ইসরায়েলের বেসামরিক ও আইডিএফ সেনাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনার জন্য জ্যেষ্ঠ হামাস নেতাদের বৈঠক স্থলের কাজ করত।
বিবিসি জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের এসব অভিযোগ স্বাধীনভাবে যাচাই করতে সক্ষম হয়নি। হানিয়াকে ব্যাপকভাবে হামাসের সামগ্রিক নেতা বলে বিবেচনা করা হয়। ২০১৭ সালে তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন। তবে কয়েক বছর ধরে তিনি কাতারে বসবাস করছেন।
২০০৬ সালে হানিয়াকে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু ২০০৭ সালে হামাস প্রাণঘাতী এক সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আব্বাসের ফাতাহ পার্টিকে গাজা থেকে হটিয়ে দেয়। এরপর আব্বাস হানিয়াকে বরখাস্ত করেন। আব্বাসের এই পদক্ষেপকে ‘অসাংবিধানিক’ অভিহিত করে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন হানিয়া।
অন্যদিকে, ইসরায়েল গাজার বৃহত্তম আল শিফা হাসপাতালে বৃহস্পতিবারও অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গাজার বৃহত্তম এই হাসপাতালে বুধবার এ অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, হাসপাতালটিতে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সদস্যরা লুকিয়ে আছেন এবং সেখান থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
একই অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের অভিযোগ, গত ৪০ দিনের যুদ্ধে আল শিফা হাসপাতালের নিচে থাকা হামাস কমান্ড সেন্টারটি মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
তবে হামাস ও হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, প্রাথমিক অভিযানে তারা কিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে।
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের প্রধান মেজর জেনারেল ইয়ারন ফিঙ্কেলম্যান সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, আজরাতে শিফা হাসপাতালে আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিচালনা করেছি। আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
এদিকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার বলেছে, ইসরায়েল বুলডোজার দিয়ে হাসপাতালের দক্ষিণ প্রবেশ দ্বারের কিছু অংশ ধ্বংস করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ অবস্থাকে ভয়ঙ্কর বলে বর্ণনা করেছেন। চিকিৎসকরা চেতনানাশক ছাড়াই চিকিৎসা করছেন। মৃতদেহের দুর্গন্ধে ভরা করিডোরে যারা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের বলছে খাবার নেই, পানি নেই।
এর আগে গাজা উপত্যকার সাবরা এলাকার একটি মসজিদে বোমা হামলা করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ডজন খানেক আহত হয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার মধ্যেই বিভিন্ন হাসপাতাল ও মসজিদগুলোতে বোমা হামলা করছে তেল আবিব। ইরানি সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি এ খবর জানিয়েছে।
বুধবার বিকালে প্রেস টিভির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নামাজের সময় মসজিদে বোমা হামলা করেছে ইসরায়েল। আক্রমণের সময় মুসুল্লিতে পরিপূর্ণ ছিল মসজিদ।
তাছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরের টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ারে বিমান হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলায় একজন শিশু নিহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর গাজাবাসীকে দক্ষিণ গাজায় সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা বলছে, গাজার সব জায়গায় বোমা হামলা করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার কোনো স্থানই আমাদের জন্য নিরাপদ না।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে অন্তত ১১ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চার হাজার ৭১০ জন শিশু এবং ৩ হাজার ১৬০ জন নারী রয়েছেন। তাছাড়া ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন।
"