আহমেদ জামিল, সিলেট
সিলেটে শিক্ষা খাতে এক যুগ
৫২৫ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে অবকাঠামো বিপ্লব
* দুটি কারিগরি ও দুটি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন * ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটের ৩১ মাদরাসায় একটি করে একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ চলছে
সিলেটে এক যুগে চারটি কারিগরি ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনগুলো ভেঙে প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন একাডেমিক ভবন। প্রায় ৫২৫ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে এসব উন্নয়ন হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাপক ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সিলেটে শিক্ষার অবকাঠামোগত উন্নয়নকে ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত প্রায় ৫২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ প্রকল্পই বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু চলমান রয়েছে। মেগা প্রকল্পের বাইরে ভবন সংস্কার, ওয়াশ ব্লক নির্মাণ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য র্যাম্প ও সহায়ক ওয়াশরুম, মূল ফটক ও দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ভবনগুলোয় আধুনিক ক্লাসরুম, পয়োনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা, ব্ল্যাক ও সাদা বোর্ড ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ করে ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় ও বজ্রনিরোধ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে।
অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার থাকা সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে জেলা সদরে অবস্থিত স্নাতকোত্তর কলেজগুলোর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটের মুরারিচাদ (এমসি) কলেজে ১০ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ২০১৯ সালে নেওয়া এ মেগা প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়।
এদিকে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে সিলেটে সবচেয়ে বড় অর্জন দুটি নতুন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিএসসি) স্থাপন। সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় এ দুটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজ চলছে। প্রায় ১৭ কোটি টাকা করে দুই প্রতিষ্ঠান নির্মাণে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ৫৪০ দিন মেয়াদের এ দুই প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সরকারি কলেজগুলো বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সিলেটের জকিগঞ্জ সরকারি কলেজে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ছয়তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া ভবনের নির্মাণকাজ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে।
সিলেট, বরিশাল ও খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৭টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত দুই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ছয়তলা ভিত্তিবিশিষ্ট সিলেট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন কাম প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণে দুই বছর মেয়াদি কাজ ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়। পরে ওই ভবন ৬ তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়। দুই দফায় নির্মাণ ও সংস্কার কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। একই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাততলা ভিত্তিবিশিষ্ট দক্ষিণ সুরমা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সাততলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে একই সময়ে।
সিলেটে মাদরাসার অবকাঠামো উন্নয়নে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটের ৩১টি মাদরাসায় একটি করে একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। চারতলার প্রতিটি ভবনের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। ৩৬৫ দিন মেয়াদের এ প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের শেষদিকে কাজ শেষ হবে বলে জানায় শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একযোগে জেলার ৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে নতুন ভবন নির্মাণ। ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলার ৬টি ও বাকি ১২ উপজেলায় ৫৮টি। সিলেট সদর উপজেলার ৬টি ভবন নির্মাণে প্রায় ৪ কোটি টাকা করে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি। বাকি ৫৮টি ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৭৪ কোটি। ৫৪০ দিন মেয়াদের এ প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়া সিলেটের আরো ৬৩টি বিদ্যালয়ে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ চলছে। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার ৬৩টি বিদ্যালয়ের ৬৩টি ভবনের কাজ চলছে। দোতলা ভবনের চারতলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করতে প্রতিটি ভবনের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের কাজ ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার এমসি একাডেমি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজকে মডেল স্কুলে রূপান্তরিত করতে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে।
সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (সেসিপ) আওতায় সিলেটের ২৯টি বিদ্যালয়ে চারতলা ভিত্তিবিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল প্রায় ২৯ কোটি টাকা। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে মে মাসে শেষ হয়েছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১০ সালে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ও অগ্রগামী বালিকা বিদ্যালয়ে চারতলার দুটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ভবনের ব্যয় ধরা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার নাজমুল ইসলাম বলেন, নতুন করে যত প্রকল্প আসছে, আমি সিলেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করতে প্রস্তাবনা পাঠাই। নতুন ভবন নির্মাণের পর দায়িত্ব হস্তান্তরের ১ বছরের মধ্যে সংস্কার বা মেরামত যোগ্য হলে আমরা তা করে দিই। তবে প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কোনো কিছু নষ্ট হলে সেটা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সংস্কার করবে।
সিলেটের শিক্ষা খাতের অবকাঠামো উন্নয়নের সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন করেছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুল আরেফিন খানের সময়ে। তিনি জানান, টেন্ডার বিকেন্দ্রীকরণ করায় এখন জেলা থেকে বিভিন্ন কাজের টেন্ডার দেওয়া হয়। ফলে আগের মতো টেন্ডার নিয়ে মারামারি, কাড়াকাড়ি হয় না। স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে আমরা কাজ করি।
"