কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম

  ০৪ অক্টোবর, ২০২৩

প্রতি আসনেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয়

চট্টগ্রামে নির্বাচন সামনে রেখে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে। এ নির্বাচন ঘিরে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেকায়দায় আছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রায় প্রতিটি আসনেই দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে বিভক্তি-কোন্দল। কারো মাঝে কোনো ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নেই। এরই মধ্যে বেশিরভাগ আসনে একাধিক শক্তিশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী তৎপরতা শুরু করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এবারও মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগের বয়স্ক যে ক’জন নেতা রয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম মোশাররফ। এ আসনে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা সাপে-নেউলের মতো। দু’পক্ষের সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এ আসনে তরুণ শিল্পপতি চট্টগ্রাম জুনিয়র চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিটও পিছিয়ে নেই। এ আসনটি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি আসন। কারণ এ আসনকে ঘিরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চলের বিশাল বিনিয়োগ। বর্তমান সরকারের বড় উন্নয়ন প্রকল্পের মাঝে ‘সর্ববৃহৎ ইকোনমিক জোন’ হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। সুতরাং এ আসন ঘিরে মাতামাতি নজরে পড়ার মতো।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তিনি তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান। সংগঠনটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক। ফলে কেন্দ্রে ভান্ডারীর যথেষ্ট প্রভাব আছে। কিন্তু নিজ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ তার বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম এবং সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি বেশি সোচ্চার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেলেও আওয়ামী লীগকে কীভাবে তিনি সামাল দেবেন, তা নিয়ে এলাকায় এখন আলোচনা চলছে।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ্য দিদারুল আলম। এবারও তিনি দলের মনোনয়ন পেতে পারেন। এ আসনে মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া। দুজনে মাঠে ময়দানে সক্রিয় রয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ) আসনে এবার রীতিমতো বড় ধরনের শোডাউন দিয়ে জানান দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক সফল চেয়ারম্যান এম এ সালাম। এ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো অবস্থায়ই জাতীয় পার্টির এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলামকে এবার মেনে নেবে না বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বার বার আওয়ামী লীগের কাঁধে চড়ে এমপি হওয়া ব্যারিস্টার আনিস হাটহাজারীর উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেননি। এ নিয়ে অভিযোগ অহরহ। আসনটিতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এবার প্রার্থী হতে চাইছেন। তরুণ রাজনৈতিক নেতা রাশেদুল আলম রাসেলও চষে বেড়াচ্ছেন পুরো হাটহাজারী। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন চাইবেন রাসেল। বসে নেই আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুচ গনি চৌধুরীও। তিনিও প্রার্থী হওয়ার জন্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনের সংসদ সদস্য জাসদের মইনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের নোমান আল মাহমুদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সামনের নির্বাচনে নোমানকে আবার মনোনয়ন দেওয়া হবে নাকি নতুন মুখ আসবে- এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। মহাজোটের কোনো প্রার্থী হিসেবে চান না স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন নাগরিক কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন। তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে জড়িত।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মনোনয়ন চাইবেন- এটি প্রায় নিশ্চিত। তবে এ আসনেও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও প্রার্থী হওয়ার জন্য চেষ্টা চালাবেন বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর) আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমিন মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। শেষ পর্যন্ত আসনটি তার হাতে থাকবে কিনা, এ নিয়ে চলছে আলোচনা। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সাবেক মেয়র মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুও।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ফের প্রার্থী হতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন। তবে এ আসনে প্রার্থী হতে মরিয়া মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। নগর আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে লতিফের উপস্থিতি তেমন একটা চোখে না পড়লেও মাঠে-ময়দানে সক্রিয় রয়েছেন সুজন। বিশেষ করে ৬ মাস সিটি করপোরেশনের প্রশাসক থাকাকালীন সুজনের কর্মকাণ্ড ব্যাপক প্রশংসা পায়। দলের হাইকমান্ডও তার কাজে সন্তুষ্ট। ফলে সুজনকে বানানো হয় ১৪ দলের সমন্বয়ক।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। একসময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে এ দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মীর বিরোধ রয়েছে। এ আসনে প্রার্থী হতে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। বসে থাকবেন না বিপ্লব বড়ুয়াও। বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশ কয়েকজন নেতা।

আওয়ামী লীগদলীয় একাধিক সূত্রমতে, প্রায় প্রতিটি আসনে কোন্দল, প্রার্থীজট দুশ্চিন্তায় ফেলছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের। এখন থেকে চলছে সমীকরণ মেলানোর কাজ। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে কোন্দল, বিদ্রোহী ঠেকাতে দলের পক্ষ থেকে কঠোর শাস্তির ইঙ্গিতও দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close