প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
থামছে না প্লাস্টিক বর্জ্যে সাগরদূষণ
ভরা মৌসুমে সেন্টমার্টিনে আগত পর্যটক প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার কেজি একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলেন বলে জানিয়েছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা অলাভজনক সংস্থা দ্য আর্থ। সংস্থাটির তথ্যানুসারে, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার পর্যটক দ্বীপটিতে ঘুরতে যান। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ভরা মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যায়। অন্যদিকে শুধু পটুয়াখালীর জেলেরাই প্রতি বছর এককভাবে প্রায় ১৫ টন অপচনশীল বর্জ্য সাগরে ফেলছেন বলে জানা গেছে।
দ্য আর্থের সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার সিনথিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্থানীয় জনসংখ্যাও অনেক বেড়েছে।’ গত বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) আয়োজিত ‘প্লাস্টিকমুক্ত সেন্টমার্টিন’ বিষয়ক প্যানেল আলোচনায় তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। সিনথিয়া জানান, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে বছরে প্রায় ৮৭ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলা হয়। বেশিরভাগ বর্জ্য পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদীতে ফেলা হয়, যা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মেশে বলেও জানান তিনি। তবে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবুল আজম কোরেশী বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার পর্যটক যায়। ভরা মৌসুমে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ে এবং কখনো কখনো তা ৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
অন্যদিকে পটুয়াখালীর জেলেরা প্রতি বছর এককভাবে প্রায় ১৫ টন অপচনশীল বর্জ্য সাগরে ফেলছেন বলে জানা গেছে। বেসরকারি সংস্থা ইকোফিশের গবেষণায় দেখা গেছে, এসব বর্জ্যরে মধ্যে আছে প্লাস্টিক ব্যাগ, বোতল, পলিথিন, বিস্কুটের প্যাকেট ও সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলারে ব্যবহৃত খাবার বহনের প্যাকেট। পরিবেশ, মৎস্যজীবী ও উপকূল নিয়ে কাজ করা এ সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন আলীপুর ও মহিপুর নামে দুটি ফিশ ল্যান্ডিং স্টেশনের জেলেদের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়।
প্লাস্টিক দূষণ : একেকটি ট্রলার সারা বছর ১৫টি ট্রিপে প্রায় সাড়ে ৩৭ কেজি বর্জ্য সাগরে ফেলে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া জন্য ও মাছের সুষ্ঠু প্রজনন নিশ্চিত করতে বছরের ৭ মাস সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। বাকি ৫ মাস জেলেরা মাছ ধরতে পারেন। ইকোফিশের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, এ ৫ মাসে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৪০০ ট্রলার মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে যায়। প্রতিটি ট্রলারে ১২ থেকে ২০ জেলে থাকেন এবং প্রতি ট্রিপে একেকটি ট্রলারকে তিন দিন থেকে প্রায় এক সপ্তাহ সমুদ্রে থাকতে হয়।
এ মেয়াদে একেকটি ট্রলার গড়ে ১৫টি ট্রিপ দিতে পারে। প্রতি ট্রিপে জেলেরা তাদের সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল, পলিথিন, বিস্কুট ও খাবারের প্যাকেটসহ আড়াই কেজি ওজনের প্লাস্টিক নিয়ে যান। ব্যবহারের পর এর প্রায় পুরোটা তারা সাগরে ফেলে দেন। এ হিসাব অনুসারে এটা অনুমান করা যায়, একেকটি ট্রলার সারা বছর ১৫টি ট্রিপে প্রায় সাড়ে ৩৭ কেজি বর্জ্য সাগরে ফেলে।
ইকোফিশের গবেষণা সহযোগী সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ‘আমাদের বেঁচে থাকার জন সমুদ্রকে দূষণমুক্ত রাখার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। সমুদ্রের পরিবেশ দূষণমুক্ত না রাখতে পারলে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।’ ইকোফিশের গত এক বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যটক ও স্থানীয়রা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে প্রতিদিন ২২ কেজির বেশি অপচনশীল বর্জ্য ফেলেন।
"