নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঢাকা-জামালপুর রেলপথে ট্রেন সংকট, ভোগান্তি

ঢাকা-জামালপুর রেলপথে যাত্রী ভোগান্তির আর শেষ নেই বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই লাইনে ট্রেন চলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ বাজার রেলস্টেশন থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত। এ লাইনে আন্তনগর ট্রেনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা ৫ গুণ। প্রতিদিন প্রতিটি ট্রেনেই হাজার হাজার যাত্রীকে গাদাগাদি করে ভ্রমণ করতে হয়।

রেলসূত্র জানায়, দেওয়ানগঞ্জ থেকে কমলাপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা আন্তনগর ট্রেন বেশ কয়েকটি স্টেশনে থামে। আসা বা যাওয়ার পথে প্রথম ও শেষ স্টেশন বাদে প্রতিটি স্টেশনেই ট্রেন আসার আগে যাত্রীতে ভরে যায় প্ল্যাটফর্ম। ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে থাকেন শত শত নারী-পুরুষ। ট্রেন এলে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, কার আগে কে উঠবেন। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ট্রেন ইসলামপুর বাজার, মেলান্দহ বাজার, জামালপুর জংশন, নান্দিনা, নুরন্দি পিয়ারপুর, ময়মনসিংহ জংশন, গফরগাঁও- যে কোনো স্টেশনে দাঁড়ানোর পর যাত্রীদের এই হুড়োহুড়ির চিত্র নিত্যদিনের।

বিভাগীয় নগরী ময়মনসিংহ থেকে প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করেন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ। কিন্তু এ নগরী থেকে ঢাকাগামী আলাদা কোনো ট্রেন নেই। জামালপুর এবং নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা ছয়টি আন্তনগর ট্রেনে বরাদ্দ থাকা অল্পকিছু আসনে চড়েই পৌঁছাতে হয় গন্তব্যে। যারা ভাগ্যবান তারা আসনের টিকিট পান, বাকিরা আসনবিহীন টিকিট সংগ্রহ করে কিংবা বিনা টিকিটে চলাচল করেন।

রেলওয়ের বুকিং অফিস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ময়মনসিংহ জংশন স্টেশন হয়ে চলা ছয়টি আন্তনগর ট্রেনের সবকটি মিলিয়ে বিভাগীয় এ নগরীর মানুষের জন্য মাত্র ৫৪১টি টিকিট বরাদ্দ আছে। এর মধ্যে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা তিস্তা ট্রেনে ১৬৬টি, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে ৭০টি, তারাকান্দি থেকে ছেড়ে আসা অগ্নিবীণায় ১১০টি, যমুনায় ১১০টি, মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে ৪০টি এবং হাওড় এক্সপ্রেসে টিকিট বরাদ্দ ৪৫টি। আর সম্প্রতি জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন বিকল্প পথ হিসেবে ময়মনসিংহ হয়ে যাওয়ায় সেখানে ১৫টি আসন বরাদ্দ পেয়েছে ময়মনসিংহ রেল বিভাগ।

যাত্রীরা জানান, আসন না থাকায় দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য ১৪০ টাকা করে আসনবিহীন টিকিট সংগ্রহ কেটে নেন তারা। খুব কমই সময়ই ট্রেনে আসন পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তারা বলেন, চাহিদার তুলনার টিকিট বরাদ্দ খুবই কম। এ কারণে আসনবিহীন টিকিট বিক্রি করতে হয়। সারা দেশের মধ্যে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন হয়। তারপরও এ অঞ্চল অবহেলিত। যাত্রী চাহিদা থাকলেও আসন ও কোচ বাড়ছে না। ট্রেন বৃদ্ধি এবং চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে কোচ বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে।

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে যাত্রীদের ভোগান্তির কথা জানিয়ে ডুয়েলগেজ রেলপথসহ ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী দুইটি বিশেষ ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছে জেলা নাগরিক আন্দোলন। বিভাগীয় নগরী হিসেবে যে পরিমাণ মানুষ ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা যায়, সেই হিসেবে বরাদ্দ থাকা আসন সংখ্যা রীতিমতো হাস্যকর। এটি প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। ঢাকা-ময়মনসিংহ সিঙ্গেল লাইনে ধারণক্ষমতার বেশি ট্রেন চলছে। এছাড়া রেলপথে রয়েছে নানা সংকট ও ঝুঁকি। প্রায়ই রেলপথে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ময়মনসিংহ-গৌরীপুর সেকশনে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অন্য ট্রেন চালু হলেও ময়মনসিংহ-ভৈরব রুটে চলাচল করা জনপ্রিয় দুটি লোকাল ট্রেন (২৪১ ও ২৪৩ নম্বর ট্রেন) ও ঢাকা থেকে ভৈরব বাজার হয়ে ময়মনসিংহে আসা ৩৯ নম্বর ঈশা খাঁ ট্রেনটি চালু হয়নি। এছাড়া ময়মনসিংহ থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে চলা ২৫১ নম্বর লোকাল ট্রেনটিও পুনরায় আর চালু করেনি রেল কর্তৃপক্ষ। অন্য ট্রেনগুলোর কোচ ও রেক এলেও চারটি ট্রেনের রেক না আসায় এবং কোচ সংকটে ট্রেন চালু হয়নি।

ময়মনসিংহ জংশন হয়ে প্রতিদিন ২৮ জোড়া ট্রেন ঢাকায় চলাচল করে। এ জংশন থেকে বিভিন্ন রেলপথে চলাচল করে ৪৮ জোড়া ট্রেন। এর মধ্যে ৬টি আন্তনগর ট্রেন নিয়মিত ঢাকার দিকে চলাচল করে। একটি যায় চট্টগ্রামেও। ময়মনসিংহ-গফরগাঁও হয়ে ২৮ জোড়া ট্রেনে চলাচল করলেও সিঙ্গেল লাইনের এই রেলপথটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সিঙ্গেল লাইন হিসেবে যে পরিমাণ ট্রেন চলার কথা বাস্তবে চলাচল করছে তার চেয়ে বেশি। রেলপথটির স্থানে স্থানে স্লিপার না থাকা, স্পাইক, ফিশ বোল্ট, খিলা, হ্যান্ডেল ক্লিপ, পাথর তীব্র সংকট রয়েছে। রেললাইনের জয়েন্টে চারটি নাটের (ফিশ বোল্ট) স্থলে কোথাও দুটি কোথাও তিনটি এভাবে চলাতে হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী রেলপথের বিভিন্ন সরঞ্জাম না পাওয়ায় রেলপথটি দিনদিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close