নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সাইবার আইনের ঝুঁকি নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের নামে নতুন মোড়কে একই ধরনের নিবর্তনমূলক ধারাসম্বলিত সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস করার ঘটনায় হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটি বলছে, নতুন এ আইনটিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত, বাক-স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ যে বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেই সাইবার অবকাঠামো, ইন্টারনেট ও সংশ্লিষ্ট সব ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত অনেক বিষয়কেই উপেক্ষা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে সদ্য পাস হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলে সংস্থাটি। টিআইবি বলছে, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার বিপরীতে গিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনটি মত, চিন্তা, বিবেক, বাক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের আরেকটি হাতিয়ারে পরিণত হতে চলেছে।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিরূপ না হয়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মন্ত্রীরাসহ সব সংসদ সদস্যকে জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছিল টিআইবি। পাশাপাশি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ থেকে খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ : তুলনামূলক পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক একটি কার্যপত্রও পাঠানো হয়েছিল। অথচ আমরা দেখলাম, তাড়াহুড়ো করে আইনটি পাস করা হলো, যেখানে প্রতিশ্রুতি থাকলেও টিআইবিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের পরামর্শ ও সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি।

তিনি আরো বলেন, আমরা দেখলাম নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর মাত্র আটদিনের মধ্যে তা কণ্ঠভোটে পাস করা হলো। এর ফলে জনসাধারণের প্রত্যাশাকে একদিকে যেমন পদদলিত করা হলো, অন্যদিকে মুক্তচিন্তা, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো মৌলিক মানবাধিকার চর্চাকেও অনেক ক্ষেত্রে আবারও অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হলো, যা চরম হতাশাজনক।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা ও হামলার চেষ্টার ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো, ডোমেইন অ্যাকাউন্টস, ব্যাংক ও ডেটাবেজ থেকে সংবেদনশীল তথ্য চুরির উদাহরণ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. জামান। তিনি বলেন, যেখানে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসারে সাইবার নিরাপত্তা আইনের পরিধি ও উদ্দেশ্য হওয়ার কথা সুনির্দিষ্টভাবে সাইবার অবকাঠামো, ইন্টারনেট ও সংশ্লিষ্ট সব ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের নিরাপত্তা এবং এসবের অবাধ ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত আইনি কাঠামো তৈরি, সেখানে নতুন আইনে সে বিষয়গুলোকেই বাইরে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাইবার স্পেসে নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করে ভিন্নমত দমন ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্যই সাইবার নিরাপত্তা আইনের মোড়কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকেই বাস্তবে বহাল রাখা হলো। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার ও অপব্যবহার যেভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে জনমনে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছিল, সাইবার নিরাপত্তা আইনেও একইভাবে সাইবার মাধ্যম ব্যবহারকারীর জন্য হয়রানি, হুমকি, আতঙ্ক ও সাইবার নিরাপত্তাহীনতাবোধ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে প্রণীত হলো। এমন উদ্বেগ মোটেই অমূলক নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close