নিজস্ব প্রতিবেদক
গণভবনে স্থানীয় সরকার দিবসের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
দেশের উন্নয়নে জনপ্রতিনিধিদের আরো সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান
* ৯৯ শতাংশ জনপ্রতিনিধি কোভিড পরিস্থিতি আন্তরিকভাবে মোকাবিলা করেছেন * অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছেন * জনপ্রতিনিধিরাই সত্যিকার অর্থে মূল শক্তি
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক মেম্বার আছেন, চেয়ারম্যান আছেন; সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আছেন, মেয়র আছেন। এই জনপ্রতিনিধিরা সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়ে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন ও দিকনির্দেশনার সবই এই জনপ্রতিনিধিরা বুকে ধারণ করেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন।
তিনি বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনপ্রতিনিধিদের মিলনমেলায় বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই মিলনমেলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গণভবন প্রাঙ্গণে এ আয়োজনে যোগ দেন দেশের ৮ হাজার আমন্ত্রিত জনপ্রতিনিধি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। দেশে এবারই প্রথম স্থানীয় সরকার দিবস উদযাপন করা হয়।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তৃণমূলের নেতৃত্বকে উষ্ণ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। দেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নে আরো আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণের জন্য তাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, এক সময় আমাদের ভিক্ষুক ও মিসকিনের জাতি বলা হতো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদরাসা করা হয়েছে। দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি ও রাস্তাঘাট অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়েছে। আজকে যারা তৃণমূল পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশে মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের একত্র করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে প্রয়াস তার জন্য এ দিবসটি উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণের জন্য নীরবে-নিভৃতে সারাক্ষণ কাজ করছেন সেই মানুষগুলো একসঙ্গে করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের কারণেই আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। আপনারা সবাই এখানে উপস্থিত হওয়ায় আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নতি করার স্বপ্ন দেখেছেন এবং সে স্বপ্ন পূরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি আন্তরিকভাবে অনুধাবন করেছেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের গ্রামে পর্যাপ্ত সংখ্যক মেম্বার আছেন, চেয়ারম্যান আছেন; সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আছেন, মেয়র আছেন। এই জনপ্রতিনিধিরা আপনার নির্দেশে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়ে আপনার লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই প্রতিনিধিরা আপনাকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসেন, আপনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা কাজ করেন। তারা আপনার সামনাসামনি আসার সুযোগ পান না। কারণ আপনি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করেন, অনেক বেশি কাজ করেন। আমি দেখলাম, এখানে বসেই আপনি সংসদের অনেক কাজ করেছেন। এখানে আসার আগে আপনি আপনার অফিসে দেশি-বিদেশি সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আপনি অল্প সময়ে সম্পন্ন করে আজকে দেশকে উন্নয়নের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা একসময় হতদরিদ্র দেশ ছিলাম। আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৯৪ ডলার। তারপর ৩২৯ ডলার। সেখান থেকে আরম্ভ করে আজকে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। আমরা মধ্য আয়ের দেশ হয়েছি। আমরা উপযুক্ত ও উন্নীত হয়েছি একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে। এরপর আপনি ঠিক করেছেন ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ হবে এবং এর নেতৃত্ব আপনি দিচ্ছেন। আপনি ডেল্টা প্ল্যান করেছেন। আপনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য কীভাবে অর্জন করা যাবে সে ব্যাপারে আপনি নিবিড়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এবং সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। আপনার এই দর্শন ও দিকনির্দেশনার সবই এই জনপ্রতিনিধিরা বুকে ধারণ এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরো বলেন, এই জনপ্রতিনিধিরা বিপদে-আপদে আপনার পাশে দাঁড়ায়। দেশের ৯৯ শতাংশ জনপ্রতিনিধি কোভিড পরিস্থিতি আন্তরিকভাবে মোকাবিলা করেছেন। তারা অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, বিপদগ্রস্ত মানুষের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। মৃতদেহ সৎকার করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। এসব কঠিন ও জটিল কাজ তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই করেছেন। জনপ্রতিনিধিরাই সত্যিকার অর্থে মূল শক্তি।
মো. তাজুল ইসলাম আরো বলেন, জনপ্রতিনিধিরাই পারেন কারণ তাদের সঙ্গে বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের সঙ্গে ২০০ থেকে ৫০০ মানুষের সরাসরি সংযোগ থাকে। মেম্বারদের কর্মী থাকেন এবং কর্মীদের মাধ্যমে সব এলাকাকে তারা একত্রিত করে ফেলতে পারেন। এভাবেই তারা বিপদে-আপদে মানুষের পাশে ছিলেন। আপনি যখন যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেটা হয়ত কয়েকজন মানুষ, সাংবাদিক বা টেলিভিশনের মাধ্যমে বলেছেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা আপনার সব খবর রাখেন। আপনি যখন যা করার জন্য বলেন, সেটা আন্তরিকতার সঙ্গে তারা ধারণ করেন। এই জনপ্রতিনিধিরা সবাই আপনার দলের না হলেও যারা সাধারণ জনগণের সমর্থনে বা অন্য কোনো দল থেকে এসেছেন তারা সবাই আপনার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ব্রিকস ও জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিয়ে অল্প সময়ে বাংলাদেশকে যে সম্মানের আসনে উন্নীত করেছেন তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। আপনি দারিদ্র্যবিমোচন করেছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
"