অলিউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  ০৯ জুন, ২০২৩

রেলসেবায় অবহেলিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ

* বন্ধ হওয়া চার জোড়া ট্রেন চালু এবং বনলতা ট্রেনের আসনসংখ্যা বাড়ানোর দাবি

দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন নতুন ট্রেন চালুসহ রেলসেবার উন্নয়ন হচ্ছে, তখনো অবহেলিত থেকে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। নতুন ট্রেন তো আসছেই না বরং বন্ধ হয়ে যাওয়া চার জোড়া ট্রেন এখনো চালু হয়নি। অন্যদিকে ঢাকাগামী একমাত্র ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেসের বগি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আসন সংকটের কারণে বনলতা এক্সপ্রেস নিয়েও অসন্তুষ্টি রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এর আগে দুটি কমিউটার ট্রেন দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষকে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনার বিস্তার হলে কমিউটার ট্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ঢাকা যাওয়ার একমাত্র ট্রেন হয় বনলতা। সম্প্রতি এ ট্রেনেরও বগি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

করোনাকালে বন্ধ হয়ে যাওয়া চার জোড়া ট্রেন চালু না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী। দফায় দফায় সচেতন নাগরিকরা ট্রেনগুলো চালুর দাবিসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেলসেবার মানোন্নয়নে কর্মসূচি পালন করেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। রেলওয়েসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশ্বাসেই পার হয়েছে অন্তত তিন বছর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে করোনাকালে পাঁচ জোড়া ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। পরে সিরাজগঞ্জ মেইল ট্রেনটি চালু হয়। কিন্তু আরো চারটি ট্রেন বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো- সাটল-২, সাটল-৪, রাজশাহী লোকাল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর লোকাল। করোনাভাইরাসের উপদ্রুপ কমার সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিকরণে এ ট্রেনগুলো চালুর দাবি জেলাবাসীর। বন্ধ ট্রেনগুলো চালু করার জন্য একাধিক কর্মসূচিও পালন করেছে জেলার মানুষ। কিন্তু দাবিগুলো অধরাই রয়ে গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এ জেলার রেলব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে। জেলায় আধুনিক রেলস্টেশন, বাইপাস লাইন নির্মাণ করেছে। অথচ করোনার সময়ে বন্ধ করা ট্রেনগুলো আর চালু করা হয়নি, এটা দুঃখজনক।

তিনি বলেন, আশপাশের জেলার মানুষ ৪-৫টি আন্তনগরসহ বিভিন্ন ট্রেনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিরাপদে যাতায়াত করতে পারছেন। আমাদের এখান থেকে ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রীরা রেলসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ট্রেনগুলো চালু হলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে। আমরা একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়ে সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি। কিন্তু উদ্যোগের অভাবে এ ট্রেনগুলো চালু হয়নি। রাজশাহী পর্যন্ত চলাচল করে এমন সব ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করার দাবি জানান তিনি।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত একমাত্র চালু থাকা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের চাহিদার তুলনায় কম আসনের টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে জেলাবাসীর। সূত্র বলছে, বনলতা ট্রেনটিতে এ জেলার জন্য ১৯৬টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে।

সেরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, অনলাইনে অনেক দিন টিকিট কাটার চেষ্টা করেছি, পারিনি। যারা অনলাইনে অভ্যস্ত, তারাই টিকিট কাটতে পারছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রেনে করে ঢাকা যাওয়া এখন স্বপ্ন। সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত লাইনে দাঁড়ালে তবেই টিকিট মেলে। টিকিট কম।

আবদুর রহমান নামে এক শিক্ষক বলেন, সড়ক পথের চেয়ে রেলপথে যাতায়াত স্বাচ্ছন্দময় ও আপেক্ষিকভাবে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। বাসে ঢাকা গেলে যত টাকা লাগে, তার অর্ধেক টাকা লাগে ট্রেনে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে একাধিক ট্রেন বিভিন্ন রুটে চলাচল করত। সে সময় তেমন ভোগান্তি হতো না। কিন্তু এখন ট্রেন কম, যেগুলো যাতায়াত করে সকালে। বেলা ১১টার পর আর কোনো ট্রেন নাই, সব বন্ধ।

বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো চালুর বিষয়ে স্টেশন মাস্টার ওবাইদুল্লাহ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আট জোড়া ট্রেন বন্ধ আছে। এ ট্রেনগুলো কবে নাগাদ চালু হবে, আমাদের জানা নেই। এসব ট্রেন চালু হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর জন্য অনেক উপকার হবে।

সম্প্রতি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নাসির উদ্দিন নামে এক কর্মকর্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনগুলো চালুর বিষয়ে বলেছিলেন, রেলের লোকবল সংকট থাকায় বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো চালু হচ্ছে না। শিগগির যথাযথ নিয়ম মেনে লোকবল নিয়োগ দিয়ে বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো চালু করা হবে। কিন্তু কবে নাগাদ এসব ট্রেন চালু করা হবে, এ কথার জবাব তিনি দেননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close