গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ০৯ জুন, ২০২৩

ধুঁকছে সিরাজগঞ্জের তাঁত

শাড়ি লুঙ্গি ও গামছার জন্য বিখ্যাত সিরাজগঞ্জের বেলকুচির তাঁতশিল্প। লোডশেডিং, শ্রমিক সংকট এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে টিকতে পারছে না ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি। এরই মধ্যে এক লাখ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বেচাকেনাও ভালো যাচ্ছে না। এতে যেসব শ্রমিক কাজ করতেন তারাও বেকার হয়ে পড়ছেন। সব মিলে ধুঁকছে সিরাজগঞ্জের বেলকুচির ঐতিহ্যবাহী এই তাঁতশিল্প।

জানা গেছে, লোডশেডিংয়ের কারণে আগে যেখানে ১০ জন শ্রমিক কাজ করতেন এখন সেখানে আছেন ৩ জন শ্রমিক। বর্তমান সুতার বাজারমূল্য যা রয়েছে তাতে কাপড় উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। এতে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হাজার হাজার বেকার শ্রমিক পেশা বদল করে অন্য পেশায় যাচ্ছেন।

মালিকরা ডিজেল চালিত জেনারেটরের বিদ্যুৎ দিয়ে তাঁত কারখানা সচল রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ডিজেলের দামও বেড়েছে। তাঁত মালিকদের বিদ্যুৎ বিলও দিতে হচ্ছে আবার টাকা খরচ করে জেনারেটরও চালাতে হচ্ছে। এতে উৎপাদনে লাগছে বাড়তি টাকা। এতে মালিকদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মহাজন কাপড় বেচতে পারছে না, তাই শ্রমিকদের কাজে আসতে নিষেধ করেছে। আগে সারা দিনে একজন শ্রমিক ৭০০-৮০০ টাকার কাজ করতেন। এখন সারা দিনে একজন শ্রমিক ৩০০-৪০০ টাকার কাজ করেন। এ অবস্থায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তাঁত মালিক হাজী মো. আবু শাহীন প্রামাণিক বলেন, তাঁত মালিক হিসেবে বর্তমানে আমরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি। দিনের বেলায় ৩-৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এ সময় তেল, ডিজেল দিয়ে জেনারেটরের সাহায্যে কাপড় উৎপাদন করতে গেলে প্রচুর খরচ বেড়ে যায়। বর্তমানে কাপড় ব্যবসায়ীরা লোকসানে রয়েছে। শ্রমিকের অভাবে কাপড় উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামের শ্রমিক শাহ আলম বলেন, বর্তমানে তাঁত শিল্পের অবস্থা ভালো না। ঈদের আগ থেকেই মহাজনের কেনাবেচা ভালো না । মহাজন কাপড় বেচতে পারে না। এজন্য কারখানার শ্রমিকদের কাজে আসতে নিষেধ করেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আগে সারা দিনে ৭০০-৮০০ টাকার মজুরি পেতাম। এখন সারা দিনে ৩০০-৪০০ টাকা হয় না। বিল চাইলে কয় কাপড় বেচতে পারি নাই।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড সিরাজগঞ্জের বেলকুচি-চৌহালী উপজেলার লিয়াজোঁ অফিসার তন্বী বলেন, ‘আমরা তাঁতিদের লোন দিয়ে থাকি। আগে আমাদের লোন ছিল ১৩ হাজার টাকা। এখন আমরা সেটা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। ১৯টি তাঁত যাদের আছে তারা প্রান্তিক তাঁতি। তাদের জন্য আমরা লোনের ব্যবস্থা করেছি। প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। দুর্যোগ সময়ে তাদের সহযোগিতা করে থাকি।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড সিরাজগঞ্জের লিয়াজোঁ অফিসার (অতিঃ) মিঠুন কুমার বসাক জানান, ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত মালিকদের ঋণ দিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ বেসিক সেন্টারের আওতায় আর্থসামাজিক ও ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে ৭০০ প্রান্তিক তাঁত মালিককে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হয়েছে।

বেলকুচি উপজেলা পাওয়ার লুম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বৈদ্যনাথ রায় জানান, তাঁত পণ্য বেচা কেনা নেই বললেই চলে। কাপড় বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই তাদের তাঁত কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। জেলায় লাখ খানেক প্রান্তিক তাঁত মালিক তাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। পুঁজি সংকটে আরো অনেক তাঁত বন্ধের পথে। তাঁতশিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা জরুরি।

তিনি আরো বলেন, তাঁত মালিকদের জন্য একটি তাঁত ব্যাংক করা প্রয়োজন। এই ব্যাংকের মাধ্যমে তাঁতিদের স্বল্প সুদে তাঁত লোন দিলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close