সালাহউদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

  ০৭ জুন, ২০২৩

রঙিন আইসক্রিম : আনন্দ ও ভোগান্তি

প্রচণ্ড গরমে কাহিল হয়ে পড়ছে স্কুলগামী শিশুরা। গরমে কিছুটা স্বস্তি পেতে আইসক্রিমের দোকানে ভিড় করছে তারা। মানহীন ও ক্ষতিকর রং মেশানো এসব আইসক্রিম বিক্রি হচ্ছে পাড়া, মহল্লা, বাজারে, স্কুল ও কোচিং সেন্টারের সামনে। নিম্নমানের উপাদান ও ক্ষতিকর রং মিশিয়ে তৈরি করা এসব আইসক্রিম খেয়ে পেটের রোগে ভুগছে শিশুরা। সঙ্গে খোলা চানাচুর খেয়ে পেট ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে তারা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এমন চিত্র দেখা যায়।

অভিযোগ আছে, আইসক্রিম তৈরিতে এক ধরনের পাউডার দুধ, চিনি, ঘন চিনি, কর্নফ্লাওয়ার, স্যাকারিন, স্ট্যাবিলাইজার, ফ্লেভার, কালার ও পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। নিউ কুলফি, লাবণ্য কুলফি, ললি, জালটক, লেমন, ম্যাংগো, কুলফি ও আরো বিভিন্ন নামে ১৫ থেকে ২০টি কারখানা নিম্নমানের এসব আইসক্রিম তৈরি করে বাজারজাত করছে। অথচ এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই। শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিম্নমানের এসব আইসক্রিম খেয়ে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ৫ থেকে ২০ টাকা মূল্যের দুধ কুলফি, দই কুলফি, ঝালটক কুলফি, অরেঞ্জ কুলফি, লিচু কুলফি ও বিভিন্ন নামে এসব আইসক্রিম বাজার দখল করে রেখেছে। আইসক্রিমের প্যাকেটের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং মূল্য লেখা নেই।

জেলার কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, আইসক্রিম তৈরির জন্য যে উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ফ্রিজগুলোয় ময়লা পানি ব্যবহার করা হয়। কারখানার চারপাশে মাছি, মশার উপদ্রব তো রয়েছেই।

কমলগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সাদেক মিয়া বলেন, আমার নাতি কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সে প্রতিদিন টিফিনের কথা বলে ২০ টাকা নেয়। কয়েক দিন থেকে সে অসুস্থবোধ করছে। গলা ব্যথা, পেট ব্যথা। ডাক্তার দেখানো হলে জানতে পারি সে প্রতিদিন আইক্রিম ও চানাচুর খেত। খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়েছে ও ঠাণ্ডা লেগেছে। এত গরম তাই হয়তো আমাদের বলে না, আইসক্রিম খায়। কিন্তু এসব আইসক্রিম ও খোলা রাস্তার পাশে চানাচুর খেয়ে এমন সমস্যা হচ্ছে। শুধু আমার নাতির নয়, এখন অনেক বাচ্চার এমন সমস্যা হচ্ছে।

শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সামিয়া বলেন, গরমের সময় আইসক্রিম অনেক ভালো লাগে। টিফিনে ও স্কুল ছুটির পর গেটের সামনে আইসক্রিম দেখলে আর তা না খেলে ভালো লাগে না। তাই প্রতিদিন একটি হলেও খাওয়ার চেষ্টা করি। আইসক্রিম খেলে সমস্যা হয়, তাও লোভ সামলাতে পারি না।

কমলগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রণেন্দ্র কুমার দেব বলেন, ‘স্কুলের সামনে আইসক্রিম ও চানাচুর বিক্রি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, ‘স্কুলের সামনে আইসক্রিম ও চানাচুর বিক্রি বন্ধের প্রয়োজীয় ব্যবস্থা নেব।’

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, নিম্নমানের আইসক্রিম তৈরিতে ভ্রাম্যমাণ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাবারের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করা হবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close