মো. আজিজুল হাকিম, মানিকগঞ্জ

  ০৫ জুন, ২০২৩

ধুলায় ধূসর মানিকগঞ্জ

* বাতাসে ভাসছে বালুকণা * প্রকৃতির শ্বাসও যেন রুদ্ধ

দীর্ঘদিন ধরে মানিকগঞ্জ শহরের আশপাশের নদী ও বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঢাকনা ছাড়া প্রকাশ্যে শহরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দিনের বেলায় চলাচল করছে বালুবাহী ট্রাক। ঢাকনা ছাড়াই বালু বহনের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলোর আস্তর। যানবাহনের ধোঁয়া আর গাড়ির চাকার গতিতে বাতাসে ভাসছে বালুকণা। অথচ শহরের পাশেই রয়েছে জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারি-বেসরকারি শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া অপরিকল্পিত রাস্তা মেরামত কাজে ধীরগতিতেও ধুলোবালির সৃষ্টি হচ্ছে। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছের শহরবাসী। আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের রোগে। দিনে দিনে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে শহরের পরিবেশ। প্রকৃতিও যেন নিতে পারছে না নিঃশ্বাস।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ শহরের বেউথা ও ঘিওরের তরার বালুমহালসহ আশপাশের এলাকা থেকে দিনের বেলায় ঢাকনা ছাড়াই বালু বহন করছে ট্রাক। বালু নেওয়ার সময় বাতাসে উড়ছে বালু আর ঝাঁকুনিতে রাস্তায় পড়ছে মাটি বালু। রাস্তার দুই পাশে বালুর স্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া শহরের প্রধান সড়কের প্রবেশমুখে চলছে সুয়ারেজ লাইনের কাজ।

শহরের ব্যবসায়ী মামুন মৃধা বলেন, সড়কের পাশেই আমার মিষ্টির দোকান। কোনো গাড়ি গেলে বা বাতাস ছাড়লেই সব ধুলাবালি দোকানে ঢোকে। একটু পরপর দোকানের গ্লাস পরিষ্কার করতে হয়। তা ছাড়া আমাদের সারা শরীর ধুলাবালিতে ভরে যায়। ধুলাবালি বললে ভুল হবে, প্রচুর ধুলাবালি শহরে।

কলেজছাত্র সোহেল রানা জানান, বাসা থেকে শহর পর্যন্ত জামাকাপড় ভালো থাকে। কিন্তু শহরে ঢুকতেই ধুলাবালিতে জামাকাপড় ময়লা হয়ে যায়। তা ছাড়া এমন ধুলাবালি যে মাস্ক পরেও কাজ হয় না। গোসল না করে কিছুই খাওয়া যায় না। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ধুলাবালি উড়ছে, প্রশাসন কী করে বুঝি না। কারণ এসপি অফিস, ডিসি অফিস, দুটি কোর্ট, সরকারি-বেরসকারি স্কুল-কলেজ শহরের মধ্যে। এ ছাড়া এসপি ও ডিসির বাসভবনও রাস্তার পাশে।

পরিবেশকর্মী অ্যাডভোকেট দীপক কুমার জানান, শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে দিনের বেলায় বালুবাহী ট্রাক চলাচল করে, এটা দুঃখজনক। কারণ উন্নয়নকাজের জন্য এমনিতেই পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তার মধ্যে আবার ঢাকনা ছাড়া বালুবাহী ট্রাক। পরিবেশের ক্ষতি হলে প্রাণীদের মধ্যে মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী বলেন, পৌরসভার সুয়ারেজ পানির লাইনের জন্য রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। এজন্য নিয়মিত পানি দিতে বলা হয়েছে এবং দ্রুত রাস্তা মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিনের বেলায় ঢাকনা ছাড়া বালুর ট্রাকের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ চাইলে যেকোনো সময় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।

মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, দিনের বেলায় বালুর ট্রাক ও শহরের পরিবেশের বিষয়ে মাসিক মিটিংয়েও আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ পরিবেশ অধিদপ্তর কিছু বিষয় ছাড়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারে না। আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। তবে চাইলে পরিবেশ রক্ষায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও পরিবেশের বিষয়ে কাজ করতে পারেন।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ বলেন, বালু পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্রাকে ঢাকনা দিতে হবে। কারণ বালুমহাল ইজারার মধ্যে ঢাকনা দিয়ে বালু পরিবহনের শর্ত দেওয়া আছে। যদি কোনো কারণবশত সেই শর্ত ভঙ্গ করে, তাহলে তাদের সতর্ক করব। যদি ঢাকনা দিয়ে বালু না আসে, তাহলে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকনা ছাড়া বালু নেওয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ না এলে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। শহরের পরিবেশের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পৌরসভার সঙ্গে আলোচনা করা হবে। যাতে নিয়মিত পানি দেওয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close