সুমন ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ

  ২৬ মে, ২০২৩

বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ

সেবা পেতে খুলতে হবে জুতা

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের প্রবেশমুখে চোখে পড়ে ‘জুতা খুলে ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ করতে হবে’। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পরিচ্ছন্ন রাখতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি মোটেও ভালো লাগেনি সালামত সরকার (৬০) নামে এক বৃদ্ধের, এজন্য তিনি ভেতরে প্রবেশ না করে বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের বিষয়ে খবর নিতে এসেছিলেন রায়পাড়া গ্রামের সালামত সরকার। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরে প্রবেশ করছেন না। কাছে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘পায়ের জুতা খুলে সিঁড়ির নিচে রেখে ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। বিষয়টি তার ভালো লাগেনি, এজন্য ভেতরে প্রবেশ না করে বাইরেই দাঁড়িয়ে আছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সিঁড়িতে খালি পায়ে বসে থাকা সেবাপ্রার্থী সালমা আক্তার, রেণু বেগমসহ কয়েকজনও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ‘জুতা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ করা যায় না, সেজন্য জুতা মাটিতে রেখে উপরে উঠেছেন তারা। আগে এমনটি ছিল না, তবে কিছুদিন ধরে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোফাজ্জল মিয়া বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ মসজিদ নয় যে পাকপবিত্র হয়ে সেখানে প্রবেশ করতে হবে। গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আসবে-যাবে, তাদের পায়ে জুতা থাকবে, থাকবে না এটাই তো নিয়ম। জুতা পায়ে দিয়ে আসতে হবে এবং সেটা খুলে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে প্রবেশ করতে হবে এমন নিয়ম বাংলাদেশের কোনো ইউনিয়ন পরিষদে আছে বলে আমার জানা নেই। কেউ খালি পায়ে এলে অন্য কারো কাছ থেকে জুতা ধার করে পা ধুয়ে তারপর ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ করতে হয়। বিষয়টি বিড়ম্বনার।’

জানা গেছে, গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান জুয়েল জনসাধারণকে জুতা খুলে ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ করার জন্য নির্দেশ জারি করেন। কিছুদিন ধরে নতুন এ নিয়ম চালু হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন ইউনিয়নের শত শত নারী-পুরুষ। তারা ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে এসে রীতিমতো পরিষদের লোকজনদের কাছ থেকে আপত্তিজনক ব্যবহার ও কথাবার্তা শুনছেন।

এ বিষয়ে বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ফিরোজ আহম্মেদ আজাদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে কিছুদিন আগে চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এতে করে সেবাপ্রত্যাশীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে আমি মনে করি না।

এদিকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে সমালোচিত ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান জুয়েল। ২৩ মার্চ ইউপি সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দেন ইউনিয়নটির ১১ জন মেম্বার।

গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ‘এরকম কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। আমি খবর নেব। চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান জুয়েলের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের অনাস্থার বিষয়ে তদন্ত চলছে। গজারিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিএম রাশেদুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি দ্রুতই প্রতিবেদন পেশ করবেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close