নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ মে, ২০২৩

সিএলপিএ ট্রাস্টের পর্যবেক্ষণ

রাজধানীতে হেঁটে স্কুলে যাওয়ার পরিবেশ নেই

ঢাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর আসে গণমাধ্যমে। আর দুর্ঘটনায় প্রাণহানির বড় অংশ পথচারী। তাদের মধ্যে আছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীও। যানজটের এই শহরে নিরাপদে স্কুলে যাতায়াতের নিশ্চয়তার দাবিতে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও সড়কে মৃত্যু থামে না। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সুবিধা না থাকায় পথচারীদের জন্য ঝুঁকি রয়ে যায়। নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে রাজধানীতে হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করা নিরাপদ নয় বলে ঢাকায় আয়োজিত এক সচেতনতামূলক কার্যক্রমে উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স (সিএলপিএ) ট্রাস্টের সচেতনতামূলক কার্যক্রমে এসব বিষয় উঠে আসে। যেখানে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অব এনজিও’স ফর রোড সেফটির সহযোগিতায় রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বেঙ্গল মিডিয়াম হাইস্কুল এবং আজিজ খান রোডে অবস্থিত ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলে সড়কে পথচারীদের নিরাপদে চলাচলের বিষয়ে একটি সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সেখানে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরা হয়। এই চিত্র অনুযায়ী, ওই বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। তাদের মধ্যে ৮০৩ জনই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। শতকরা হিসাবে যা মোট প্রাণহানির ১৩ শতাংশ।

জানা যায়, সচেতনতামূলক কার্যক্রমে দুই স্কুলের প্রায় ১০০ ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। কার্যক্রমে সিএলপিএর প্রোগ্রাম অ্যাডভাইজার আমিনুল ইসলাম বকুল পথচারী নিরাপত্তা খসড়া প্রবিধানমালা, ২০২১ দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বেঙ্গল মিডিয়াম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদে হেঁটে স্কুলে আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হলো স্কুলের আশপাশে ফুটপাতে ময়লা-আবর্জনা এবং বিভিন্নভাবে দখল হয়ে যাওয়া স্থান। স্কুলের আশপাশের সড়কে প্রয়োজনীয় জেব্রাক্রসিং ও গতিরোধক না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই হেঁটে স্কুলে আসতে হয় শিক্ষার্থীদের। তা ছাড়া রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ির আধিক্যের কারণে ছাত্রছাত্রীরা সড়কে নিজেদের নিরাপদ মনে করে না। সড়কে পথচারীদের নিরাপদ করতে হলে অবশ্যই এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তবে আমাদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে।

ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির বলেন, দোকানের সরঞ্জাম রাখার কারণে দখল হয়ে যাওয়া ফুটপাত দিয়ে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকরা নির্বিঘ্নে হেঁটে চলাচল করতে পারেন না। তা ছাড়া ফুটপাতগুলো মূল রাস্তা থেকে তুলনামূলক উঁচু হওয়ায় বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং সাধারণ মানুষের হেঁটে চলাচলে সমস্যা তৈরি করছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা যদি স্থানীয়ভাবে এ সমস্যার বিষয়ে এগিয়ে আসেন তবে সমস্যা সমাধান হবে। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটির চাহিদা অনুযায়ী সমস্যার সমাধানে তারা নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এসব সমস্যা সমাধান সম্ভব। তা ছাড়া ট্রাফিক সিগন্যালও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, নিরাপদে সড়কে হেঁটে চলাচলের ক্ষেত্রে তারা প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সড়কে প্রয়োজনীয় জেব্রাক্রসিং ও গতিরোধক না থাকায় তারা সড়কে নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারেন না।

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, রাস্তায় যে ফুটপাত রয়েছে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হেঁটে চলাচলের অনুপযোগী। অনেক ক্ষেত্রেই ফুটপাত ভাঙা, ময়লা-আবর্জনা এবং প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং ও বিভিন্ন দোকানের কারণে দখল হয়ে যাওয়ায় তারা হাঁটতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এসব কারণে তাদের বাধ্য হয়ে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় নেমে হেঁটে চলাচল করতে হয়, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক রাস্তায় ট্রাফিক থাকে না। ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তাও ময়লা-আবর্জনায় নোংরা হয়ে থাকে। নিরাপদে হেঁটে স্কুলে আসা-যাওয়ার জন্য এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।

সিএলপিএর পলিসি অ্যানালিস্ট আসরার হাবিব নিপু বলেন, সড়কে প্রায় ৯৫ শতাংশ পথচারী। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রশাসন এবং সড়ক ব্যবহারকারী দুই পক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হবে। সড়কে চলাচলে যে আইন রয়েছে সবাইকে সে অনুযায়ী নিয়ম মেনে রাস্তা ব্যবহার করতে হবে।

সিএলপিএর পলিসি অ্যানালিস্ট কামরুন্নিছা মুন্না বলেন, রাস্তায় হেঁটে চলাচলে অবকাঠামোগত সুবিধাগুলো নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাস্তায় হেঁটে চলাচলে আমাদেরও সচেতন হতে হবে। রাস্তায় অবশ্যই বাম পাশ দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে হবে এবং জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করতে হবে।

সচেতনতামূলক কার্যক্রমে বক্তারা প্রশাসনের কাছে রাস্তায় ফুটপাত গাড়ি পার্কিং, ময়লা-আবর্জনা এবং দোকানপাট মুক্ত রাখা, ফুটপাত উঁচু না রাখা, রাস্তায় পর্যাপ্ত জেব্রাক্রসিং এবং গতিরোধকের ব্যবস্থার সুপারিশ করেন। পাশাপাশি সবাইকে সড়কে নিয়ম মেনে চলাচলের আহ্বান জানান।

সচেতনতামূলক কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল মিডিয়াম স্কুলের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র দাস এবং ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির।

সিএলপিএর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রোগ্রাম অ্যাডভাইজার আমিনুল ইসলাম বকুল, পলিসি অ্যানালিস্ট আসরার হাবিব নিপু এবং পলিসি অ্যানালিস্ট কামরুন্নিছা মুন্না, ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাডমিন অফিসার আতিকুর রহমান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close