আল-আমিন মিয়া, পলাশ (নরসিংদী)

  ০২ এপ্রিল, ২০২৩

নরসিংদীর পলাশে তাঁত কারিগরদের ব্যস্ততা

ইসমাঈল মিয়ার বৃদ্ধ মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্য ছয়জন। তার একার উপার্জনে চলে সংসার। তাঁতে বিছানার চাদর তৈরির কারিগর তিনি। প্রায় ২৫ বছর ধরে আছেন এ পেশায়।

ঈদ এলে তার ব্যস্ততা বেড়ে যায় অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। ভোর ৫টা থেকে তাঁতে বসতে হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁত বুনতে হয়। কোনো কোনো দিন রাতও হয়ে যায়। ঈদ সামনে রেখে শাড়ি-থ্রিপিসের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই এসব তৈরি করতে হয় বছরের অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। এজন্য বাড়তি আয়ও হয়।

ইসমাঈল মিয়ার মতো নূর হোসেনও খুবই ব্যস্ত এখন। দীর্ঘদিন ধরে তারা তাঁতে চাদর বুনছেন। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কন্দুয়াব, তালতলা, জয়নগর, হাসানাটাসহ কয়েক গ্রামে গিয়ে দেখা যায় তাদের এই ব্যস্ততা। সামনে ঈদ, তাই অধিক উপার্জনের জন্য শাড়ি-থ্রিপিসও বুনছেন। এখানকার তাঁতপল্লী এখন খটখট শব্দে মুখর। কারিগররা দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন। আর ওইসব কাপড় বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে দেশের পাইকারি কাপড়ের অন্যতম প্রধান বাজার নরসিংদীর বাবুরহাটে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পাইকারি ক্রেতারা পবিত্র রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে শাড়ি, থ্রিপিস ও বিছানার চাদর কিনে নিয়ে যান এখান থেকে। এই চাহিদা পূরণ করতেই কারিগরদের এত ব্যস্ততা।

তবে তাঁতিরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট, কাঁচামালের অভাব, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সুতাসহ কাপড় তৈরির উপকরণের দাম বাড়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন তারা। একদিকে উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজারমূল্য কম হওয়ায় কাপড় তৈরি করে পোষাতে পারছেন না। অন্যদিকে বছর ভরে মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে নেওয়া ঋণ বা দাদনের টাকা পরিশোধের চাপ। তারা বড় বেকায়দায় আছেন। উপজেলার ডাঙ্গার ইউনিয়নের কেন্দুয়াব, তালতলা, জয়নগর, হাসানাটাসহ কয়েক গ্রামের হাজারো তাঁতির একই অবস্থা।

দীর্ঘক্ষণ আলাপকালে তাঁত কারিগর ইসমাঈল মিয়া প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ১ হাজার টাকায় প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে সুদ দিতে হচ্ছে মহাজনদের।

জয়নগর এলাকার তাঁত ব্যবসায়ী বশির মিয়া বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় তাদের বড় দুরাবস্থা। প্রতি মণ সুতা বাজার থেকে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় কিনতে হয়। আর মহাজনদের কাছে অগ্রিম টাকা নিয়ে কাপড় তৈরি করে সুদে-আসলে তা পরিশোধ করতে হয় এই ঈদ মৌসুমে। তাই ঈদ মৌসুমে দিন-রাত পরিশ্রম করে অধিক উপার্জনের চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁত কারিগররা। কারণ, সময়মতো মহাজনদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে শুনতে হয় কটুকথা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close