এইচ আর তুহিন, যশোর

  ০১ এপ্রিল, ২০২৩

অনলাইনে যশোরের প্রকৌশল পণ্য

যশোরের মানসম্মত হালকা প্রকৌশল (লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং) শিল্পের পণ্য এখন সারা দেশে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। এর অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে পদ্মা সেতু। ফলে আরো এক ধাপ এগিয়েছে যশোরের এই শিল্প।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, সারা দেশে যশোর অঞ্চলের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে এক বছরে ১৬২ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। যশোরে উৎপাদিত পণ্যের মান ভালো এবং দামেও সাশ্রয়ী। ফলে ভারত ও চায়না থেকে হালকা প্রকৌশল পণ্য আমদানি কমেছে। তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে এ খাতের আরো উন্নয়ন সম্ভব বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

যশোরে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে কৃষিজ মেশিন, ফুড মেশিন, ফাউন্ড্রি, ছোট ছোট কারখানার মেশিন বিভিন্ন ধরনের মোটর পার্টস, সেফটি সিকিউরিটি পার্টস, রিপেয়ারিং সার্ভিস ইত্যাদি পণ্য উৎপাদনে কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা। কারখানায় ঢালাই লোহা ও স্প্রিং লোহার সাহায্যে এসব মেশিন, মেশিনারিজ ও পার্টস তৈরি হচ্ছে। আর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বড় কারখানা থেকে পাইকারি ক্রয় করে খুচরা বিক্রি করে। তাদের এ কার্যক্রমের জন্যও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বিক্রি ও চাহিদা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত ও চায়না থেকে আমদানি করা এসব মেশিনারিজ পণ্যের দাম বেশি। ক্রেতারা বেশি দামের পণ্য নিতে চান না। তাদের প্রথমে যশোরে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে থাকেন। পরে যখন আবারও দরকার হয় তারা লোকাল পণ্যই খোঁজ করেন। সে ক্ষেত্রে বলা যায় যশোরের পণ্যের মান ভালো এবং দামও সাশ্রয়ী।

যশোর অঞ্চলে প্রায় ৩০০টি প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ শিল্প থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন হয়, যা বছরে দাঁড়ায় প্রায় ১৬২ কোটি টাকায়। বর্তমানে পদ্মা সেতু চালু ও অনলাইন প্ল্যাটফরম তৈরির ফলে ৩০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় তাদের পণ্য ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগছে এখন সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। তাছাড়া দেশের অন্যান্য জেলায় পণ্য পাঠাতেও এখন কম সময় লাগছে। কিছুদিন আগেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকত ট্রাকগুলো। কিন্তু এখন পদ্মা সেতুর ফলে দ্রুত এসব পণ্য চাহিদামতো ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই তাদের পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অথৈ লিমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী আবিদ হাসান বলেন, আগে তিনি প্রতি মাসে ১ থেকে দেড় লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতেন। পদ্মা সেতু ও অনলাইন মার্কেটে তার প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফরিদপুর, পাবনা, মুন্সীগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ কয়েকটি জেলায় অনলাইনে পণ্যের অর্ডার পান। তিনি এ ধরনের অর্ডার আগে পেতেন না বলে মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন যশোর শাখার সাধারণ সম্পাদক সামছুল আলম স্বপন বলেন, একসময় দালালের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করতে হতো। এখন অনলাইনে বিক্রিতে বেশ সাড়া পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। অনলাইনে অনেক জেলা থেকেই তারা অর্ডার পাচ্ছেন।

এদিকে যশোরের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের উন্নয়নে ২০১৯ সাল থেকে কাজ শুরু করে সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সুইচকন্টাক্টের প্রবৃদ্ধি প্রকল্প। ওই সংস্থার আরেকটি প্রকল্প ২০২১ সাল থেকে বাংলা ট্রেডার্স নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফরম কাজ করছে। সারা দেশের এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলা ট্রেডার্সের সঙ্গে সংযুক্ত করে ই-ডাইরেক্টরি ও ই-কমার্সের অধীনে আনতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ পর্যন্ত যশোর অঞ্চলের ৩শ’ কারখানা এ অনলাইন প্ল্যাটফরমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

বাংলা ট্রেডার্সের (Banglatraders.com) প্রধান কর্মকর্তা ইমানুর রহমান ইমন বলেন, দেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পপণ্য সমগ্র দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হলো বাংলা ট্রেডার্সের মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে সরকারের বাস্তায়িত অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে এই লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প অন্যতম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close