অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ৩০ মার্চ, ২০২৩

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের জরিপ

টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের বাইরে ৭২ ভাগ মানুষ

দেশের প্রায় ৭২ ভাগ মানুষ টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের আওতার বাইরে। তবে দীর্ঘ সময়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট ও প্যাকেজে নিত্যপণ্যের যৎকিঞ্চিত থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৪৮ ভাগ মানুষ কার্ডের সুবিধা গ্রহণে আগ্রহী নন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘কেমন আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ’ শীর্ষক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সংস্থাটি এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে।

জরিপের উপর বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেখা গেছে টিসিবির পণ্য একবার ক্রয় করেছে দেশে এমন জনগোষ্ঠির সংখ্যা ৯৩ শতাংশ এবং দুইবার কিনেছেন ৩.৭ শতাংশ এবং তিনবার বা চারবার পেয়েছেন এমন সংখ্যা আরো কম। তাছাড়া টিসিবির প্যাকেজের আওতায় দেয়া প্যাকেজটি (চিনি, সয়াবিন তেল, পেয়াজ এবং ডাল) দিয়ে ১৪ থেকে ১৭ দিন যায় ৩১ শতাংশ পরিবারের এবং ১০ থেকে ১৩ দিন যায় প্রায় ৩২ শতাংশের। বাকি সময়গুলো তাদেরকে বাজার থেকে কিনতে হয়। তিনি বলেন, এ জন্য একজন ব্যক্তিকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পণ্য হাতে পেতে প্রায় ৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বলে জানিয়েছে ৬ শতাংশ মানুষ, ১৫ শতাংশ বলেছে ৪ ঘণ্টা আবার ২৪ থেকে ২৮ শতাংশ বলছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অর্থাৎ টিসিবির পণ্য কিনতে যে সময় ব্যয় হচ্ছে, তাতে লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তির ওইদিন অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ থাকছে না। ৭২ শতাংশ জনগোষ্ঠী টিসিবির কার্ডের আওতার বাইরে। তাদের মধ্যে ৫২ শতাংশ টিসিবির পণ্য নিতে চাইলেও বাকি ৪৮ শতাংশ এই ভোগান্তির কারণে পণ্য নিতে চায় না।

গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, গত ৬ মাসে জাতীয়ভাবে একটি পরিবারের খরচ বেড়েছে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। যার মধ্যে গ্রাম এলাকায় ১২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এ বেড়ে যাওয়া খরচ এসব মানুষদের বিভিন্নভাবে সমন্বয় করতে হয়েছে। এ সময় খাদ্যে জাতীয়ভাবে খরচ বেড়েছে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া শহর অঞ্চলে এ খরচ বেড়েছে ১৯ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

অর্থনৈতিক এমন মন্দা পরিস্থিতি কীভাবে সাধারণ মানুষ মোকাবিলা করছে- তা জানাতে গিয়ে সানেমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৯০ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার তাদের খাদ্যভাসে পরিবর্তন এনেছেন। ধার করেছেন ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ৫৫দশমিক ৯ শতাংশ বলেছে নন ফুড আইটেমে খরচ কমিয়ে এনেছেন। সঞ্চয় করার সুযোগ কমিয়ে এনেছেন ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ওভার টাইম কাজ করছেন ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ তাদের সঞ্চয় যা ছিল তা থেকে অতিরিক্ত খরচ করছেন।

এসময় ড. সেলিম রায়হান বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের সুযোগ এমনিতেই কম তার ওপর তাদের এ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে। এ অবস্থার মোকাবিলায় শহরে খাদ্য পরিবর্তন করেছেন ৯৪ দশমিক ৪ শতাংশ আর গ্রামে সেটা ৮৬ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে ধার-দেনা করে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন শহরের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং গ্রামের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

সানেমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক ও জাতীয় বিভিন্ন কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে দেশের সাধারণ মানুষ জীবন নির্বাহ করতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছেন। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে ব্যয় বৃদ্ধি, যাতায়াতের বর্ধিত খরচ ইত্যাদি বিষয়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে আরো বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিম্ন আয়ের মানুষ কিভাবে মোকাবিলা করছে এবং সামনের দিনগুলোয় তাদের ভাবনা কি, এ নিয়ে চলতি মার্চ মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত দেশব্যাপী জরিপ পরিচালনা করে সানেম। এ সময় আটটি বিভাগীয় শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১৬০০ মানুষকে নিয়ে তাদের এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অনুষ্ঠানে সানেমের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশাসহ সানেমের অন্য গবেষকরাও উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close