নওগাঁ প্রতিনিধি

  ২৫ মার্চ, ২০২৩

নওগাঁ শহরে সরু রাস্তায় ইজিবাইকের দাপট

উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা শহর নওগাঁ। গত ১০ বছরে এই শহরে জনসংখ্যা ও যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। সময়ের সঙ্গে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। শুধু পরিবর্তন হয়নি শহরের রাস্তাঘাটের। রয়ে গেছে আগের মতোই সরু। তারপর খানাখন্দকে ভরা। এ নিয়ে প্রশাসনের উল্লেখ করার মতো কোনো পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ।

জানা গেছে, শহরের রাস্তায় প্রতিদিন বাড়ছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা। পৌর শহরের ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি ইজিবাইক চলাচল করছে। ফলে বাড়ছে যানজট। ছোট একটি শহরে ইজিবাইক ও অটোরিকশার সংখ্যা এতটাই বেশি যে, পথচারীদের চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র যানজটে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, জরুরি রোগী বহনে অ্যাম্বুলেন্সসহ সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না সড়কের মোড়ে মোড়ে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ। শহরের এই যানজট এড়াতে পৌরসভা, পুলিশ ও বণিক সমিতির নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে জানিয়েছে সচেতন মহল।

নওগাঁ পৌরসভার তথ্য মতে, এই শহরের বাসিন্দা সাড়ে তিন লাখের বেশি। ১১টি উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজারো মানুষ নানা কাজের জন্য ছুটে আসে এই জেলা শহরে। ২০১১ সাল থেকে ইজিবাইক ও অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া শুরু করে পৌর কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকে এর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। এই মুহূর্তে শহরে ইজিবাইক ও অটোরিকশার সংখ্যা ১৩ হাজারের বেশি। যা গত এক বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের মেইন রোড কাঁঠালতলী থেকে শুরু করে ডাকা বাসস্ট্যান্ড, তাজের মোড়, ব্রিজের বাটার মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, সরিষাহাটির মোড়, দয়ালের মোড় হয়ে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তায় প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শহরের প্রধান এই কয়েকটি সড়কসহ শহরের প্রাণ কেন্দ্র গোস্তহাটির মোড়, কাচাড়ি রোড ও চুরি পট্টি এলাকায় বেশির ভাগ সময় যানজট লেগেই থাকে। শহরের এই মোড়গুলো প্রশস্ত নয়। প্রধান সড়কগুলো একেবারেই সরু। তার ওপর কিছু কিছু সড়কের দুই পাশ দখল করে বসেছে নানা দোকান। শহরে ইজিবাইকের কোনো স্ট্যান্ড নেই। তাই নিয়মনীতি না মেনেই সবাই রাস্তার মাঝখানে ও মোড়ে দাঁড়িয়েই যাত্রী ওঠানামার কাজ করে। একটি ইজিবাইকে আটজন যাত্রী বসার জায়গা থাকলেও এক থেকে দুজনের বেশি যাত্রী পাচ্ছেন না কেউই। অনেকে অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করছে।

নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী রুবাইয়া তাবাস্সুম বলেন, আমি প্রতিদিন বাসা থেকে গুস্তহাটির মোড় হয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড দিয়ে স্কুলে যাই। এই সময় রাস্তায় এত ভিড় থাকে মাঝে মধ্যেই স্কুলে সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারি না। স্কুল ছুটির পরও দেখি একই অবস্থা। কখনো কখনো আমি রিকশা থেকে নেমে হেঁটে গেলেই তাড়াতাড়ি স্কুলে পৌঁছে যাই।

শহরের চকদেবপাড়ার ইজিবাইক চালক সুমন হোসেন বলেন, নওগাঁ শহরের ইজিবাইকের কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। তাহলে আমরা কোথায় দাঁড়াব? আমি ৮ বছর ধরে গাড়ি চালাই। প্রথমে গাড়ির সংখ্যা কম ছিল। রাস্তাঘাটে যানজটও ছিল না। কিন্তু বর্তমানে গাড়ি অনেক বেড়ে গেছে।

শহরের কাপড়পট্টির ইমরান নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমার দোকান রাস্তার পাশেই। আর এই রাস্তা অত্যন্ত সরু। আমার দোকানের সামনে সব সময় ইজিবাইক ও অটোরিকশার ভিড় লেগেই থাকে। তা ছাড়া ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল তো আছেই। আর এই ভিড়ের পরিমাণ এতটাই বেশি যে, কোনো কাস্টমার আমার দোকানে প্রবেশ করার রাস্তা পায় না। আর কিছু অদক্ষ ও নতুন গাড়ি চালক আছেন, তারা ট্রাফিক আইন মানে না। ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। তাদের মধ্য হাতাহাতি এবং মারামারিও শুরু হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বিকর্ণ কুমার চৌধুরী বলেন, জনসংখ্যার পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে যানবাহন। কিন্তু সেই তুলনায় রাস্তা বাড়েনি। এই সরু রাস্তায় ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি গাড়ি চলাচল করে। যার কারণে রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। আর এই যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।

নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নাজমুল হক সনি বলেন, শহরের আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন সকালে ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যান শহরের আসে আবার সন্ধ্যায় ফিরে যায়। পৌরসভার জন্য এসব অবৈধ। শহরের প্রবেশমুখে যদি এসব যানবাহন ঢুকতে দেওয়া না হয় তাহলে যানজট আর হবে না। এছাড়াও শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে নতুন লাইসেন্স প্রদান বন্ধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার রাশিদুল হক বলেন, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে আমরা একটা কমিটি গঠন করেছি। এই শহরের অটোরিকশার সংখ্যা কত এবং কীভাবে যানজট নিরসন করা যায়- সে বিষয়ে একটা রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সে অনুপাতে ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর এতে করে যানজট নিরসন হবে বলে আশা করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close