বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

  ২৩ মার্চ, ২০২৩

বাউফলে জেলেদের চাল হরিলুট

বরাদ্দ ৪০ কেজি, দেওয়া হয়েছে ৩০ কেজি করে

পটুয়াখালীর বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নে নিবন্ধিত দরিদ্র জেলেদের জন্য ৪০ কেজি হারে চাল বরাদ্দ হলেও দেওয়া হয়েছে ৩০ কেজি করে। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা বরাদ্দের বাকি চাল হরিলুট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২২ মার্চ) নাজিরপুর ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণকালে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাটকা আহরণে বিরত থাকা দরিদ্র জেলেদের জন্য ‘মানবিক কর্মসূচি’র আওতায় নাজিরপুর ইউনিয়নের ৬৮৩ জন নিবন্ধনকৃত জেলের মাঝে ৪০ কেজি হারে ২৭.৩২০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। বুধবার নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ধানদী কামিল মাদরাসা মাঠে ওই চাল বিতরণ করছিলেন ইউপি সদস্যরা।

এ সময় সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলেদের মাঝে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। পাশেই বসে আছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ও ইউপি সচিব। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন ইউপি সচিব আবু বকর।

চাল নিয়ে ফেরার পথে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে মো. রেজাউল করিম (৪৩) বলেন, আগে ৪০ কেজি করে চাল পেতাম; এবার দিয়েছে ৩০ কেজি। তবে বস্তা দেখে মনে হয় ৩০ কেজিরও কম। পরিষদের পাশে এক দোকানে মাপ দিয়ে দেখা যায় ওই বস্তায় চাল রয়েছে ২৩ কেজি ৯০০ গ্রাম। ৬নং ওয়ার্ডের জেলে আ. রহমান, মো. শাজাহান সরদার ও ফারুক মৃধা চাল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আগে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হতো, এবার ৩০ কেজি করে দেওয়া হয়েছে। ৮নং ওয়ার্ডের জেলে মো. জাকির হোসেন ও ২নং ওয়ার্ডের জেলে মো. ফিরোজ জানান, তাদেরও ৩০ কেজি করে চাল দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ব্যবসার কাজে ইউপি চেয়ারম্যান এস এম মহসিন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। চেয়ারম্যানের অনপুস্থিতিতে চাল বিরতণ নিয়ে চেয়ারম্যানের ভাই ইউপি সদস্য আহসান হাবিব মিন্টু সব ইউপি সদস্যকে নিয়ে গোপন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে জেলেদের মাঝে ৪০ কেজি চালের পরিবর্তে ৩০ কেজি করে চাল বিরতণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

হিসাব করে দেখা গেছে, ৬৮৩ জন নিবন্ধনকৃত জেলেকে ১০ কেজি করে চাল কম দিলে তাতে প্রায় ৭ টন চাল অবশিষ্ট থাকে। যার বর্তমান বাজার মূল্য আড়াই লাখ টাকার বেশি। ওই গোপন বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবশিষ্ট চাল কালোবাজারে বিক্রি করে সেই টাকা ইউপি সদস্যরা খচর হিসাবে ভাগবাটোয়ারা করে নেবেন।

জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যানের ভাই ইউপি সদস্য আহসান হাবিব মিন্টু সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘এবারের জন্য মাফ করেন। সংবাদ প্রকাশ করার দরকার নেই।’

এ বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মো. আলম হোসেন চাল কম দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘৬৮৩ জনের নামে চাল বরাদ্দ পাইছি। জেলে সংখ্যা ৭৫৩ জন। তাই সব জেলের মধ্যে ৩০ কেজি করে চাল দিয়ে সমন্বয় করা হয়েছে। ৭৫৩ জন জেলেকে ৩০ কেজি করে চাল দিলেও প্রায় ৫ টন চাল অবশিষ্ট থাকে। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। অবশিষ্ট সেই চাল কোথায় জানতে চাইলে প্যানেল চেয়ারম্যান আলম হোসেন কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

নাজিরপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বরাদ্দ কম, তাই বাকি জেলেদের সঙ্গে সমন্বয় করে চাল দিতে হয়েছে। এজন্য চালও কম দেওয়া হয়েছে।’ একই কথা বলেন ইউপি সচিব মো. আবু বকর।

উপজেলা সিনিয়র সহকারী মৎস্য অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, নিবন্ধনকৃত প্রত্যেক জেলেকে যেভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেভাবেই চাল বিরতণ করতে হবে। কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close