হায়দার আলী, পঞ্চগড়

  ২৩ মার্চ, ২০২৩

সাশ্রয়ী খাবার টোপা

প্রায় ১৪ বছর আগে অষ্টাদশী তরুণী আফরোজা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড় গ্রামের জাহের আলীর। জাহের আলীর রয়েছে স্থানীয় মীরগড় বাজারে চায়ের দোকান। তিনি সেখানে ডালের বড়া, পেঁয়াজু, বুন্দিয়া কখনো কখনো জিলাপিও বিক্রি করেন। জাহের আলীর বাবা আজিজুল হক একই বাজারে অপর একটি ছোট্ট দোকান ঘরে চালের গুঁড়া, ময়দা, চিনি অথবা গুড় মিশিয়ে বিশেষ মিষ্টান্ন তৈরি করে বিক্রি করতেন এর নাম দেন টোপা। ধীরে ধীরে এ মিষ্টান্নের কদর বাড়তে থাকে। আশপাশের লোকজন যারা সেখানে বেড়াতে আসেন তারাও টোপার স্বাদ নিতে ভুলেন না, সঙ্গে নিয়ে যান। এরই সঙ্গে দিনে দিনে বাড়তে থাকে টোপার চাহিদা।

অল্প পুঁজি খাটিয়ে বেশ লাভ হওয়ায় আফরোজা শ্বশুরের বিশেষ সেই মিষ্টান্ন তৈরির কৌশল শিখে নিজেই তৈরি করতে থাকেন মজাদার মিষ্টান্ন টোপা। সংসারের কাজের ফাঁকে তিনি বাড়িতেই তৈরি করেন এ মিষ্টান্ন। তিনিও দেখেন লাভের মুখ। নিজের তৈরি করা টোপা স্বামীর দোকানে বিক্রি করে পরিবারে ফেরে সচ্ছলতা।

আজিজুল হক বলেন, প্রায় শত বছর আগে আন্ধারী বেগম নামের এক নারী মীরগড়ে এসে বিশেষ এ মিষ্টান্ন তৈরি করে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করতেন। খেতে মজাদার ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় গ্রামের যে প্রান্তেই যেত সেখানেই তা বিক্রি হয়ে যেত। সেই থেকে জনপ্রিয় টোপা।

স্থানীয়রা বলছেন, পঞ্চগড়ের মীরগড়ে অতিথি আপ্যায়ন আর বন্ধুদের চা চক্রের আড্ডায় টোপা বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। স্থানীয়দের রসনা বিলাসের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে লোকজন। এছাড়া স্কুল-কলেজের টিফিন হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় মিষ্টান্নটি।

কৃত্রিম কোনো রং বা কেমিক্যাল না মিশিয়ে চালের গুঁড়া অথবা ময়দা দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি রসালো টোপা চিনি বা গুড়ের সিরায় ভিজিয়ে তৈরি করা হয়। দামেও বেশ সস্তা হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদাও বেশ। বাজারের কোল ঘেঁষে থাকা মীরগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ?্যালয় ও একই ক?্যাম্পাসে থাকা মীরগড় ময়নউদ্দীন উচ্চবিদ?্যালয়। দুপুরে টিফিনের ফাঁকে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে আসে জাহের আলীর চায়ের দোকানে।

স্কুল শিক্ষার্থী মাইশা, রাইসা ও অন্বেষা বলেন, টিফিনের নাশতায় টোপা খেতে তাদের ভালো লাগে। স্কুলশিক্ষক নূর আজম বলেন, অতিথি আপ্যায়নে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মিষ্টান্ন টোপা খেতে যতটা মজার একইভাবে বন্ধু বা আত্মীয়দের মাঝে পরিবেশন করেও আনন্দ পান তিনি। মীরগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতাউর বলেন, কৃত্রিম রং ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল না থাকায় টোপা নিরাপদ। মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মো. রিয়াজুল ইসলাম রিপন বলেন, জেলার ঐতিহ্যবাহী রসালো মিষ্টান্ন টোপাকে গোটা জেলায় ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে এর মাধ্যমে অনেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রসারিত হবে ক্ষুদ্র আয়ের পথ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close