প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৭ মার্চ, ২০২৩

হাত-পায়ে হাঁটা মানুষের গ্রাম

সোজা হয়ে হাঁটাই স্বাভাবিক ও আধুনিক মানুষের লক্ষণ। তবে তুরস্কের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষ দুই পায়ে সোজা দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না। তারা দুই হাত দুই পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করেন। খুব দ্রুত হামাগুড়ি দিয়ে স্বাভাবিক মানুষের গতিতেই তারা চলাফেরা করে।

এই বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী গ্রামটিতে যান। তারা হামাগুড়ি দিয়ে চলা লোকদের ভিডিও প্রচার করেন। এতেই গ্রামটি মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়।

গ্রামের মানুষের চলার ভিডিও দেখে প্রথমে অনেকেই বলেছিলেন, এটি স্থানীয়ভাবে পর্যটন বিকাশের জন্য পর্যটকদের আকর্ষণের একটি কৌশল মাত্র। কিন্তু বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ও গবেষক জানান, গ্রামের প্রতিটি নাগরিকের হাতে খুব পুরু চামড়া ছিল। তাতে বোঝা যাচ্ছিল, বহু বছর ধরে চলাচলের জন্য তারা পায়ের সঙ্গে হাতও ব্যবহার করে আসছেন।

এদিকে মাটিতে প্রতিনিয়ত হামাগুড়ি দেওয়ার কারণে গ্রামবাসীর শরীরের গঠন দুনিয়ার আর সব সাধারণ মানুষের মতো নয়। তাদের পিঠ ও কোমরের হাড়গুলো বেঁকে গেছে, নিতম্বগুলোও প্রশস্ত।

গবেষকরা আরো জানিয়েছেন, শারীরিক আকৃতির পার্থক্য ছাড়াও তাদের গড় আয়ুও কম। গ্রামটির সুস্বাস্থ্য লোকের গড় আয়ু সাধারণ মানুষের তুলনায় প্রায় ১০ বছর কম।

চীনা সংবাদমাধ্যম সোহু জানিয়েছে, গ্রামটি সম্পর্কে জানতে গিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ সেখানকার পানি থেকে শুরু করে সব ধরনের খাবার নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। কিন্তু তাদের প্রতিদিনের খাবার ও পানীয়তে আলাদা কিছু পাওয়া যায়নি।

কিছু বিশেষজ্ঞ গ্রামবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে দেখেন, গ্রামবাসীদের বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট নয়। তারা খুব আস্তে কথা বলে। গ্রামের লোকেরা খুব কমই বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের বিয়ে মূলত ইনব্রিডিং (অন্তঃপ্রজনন) নির্ভর। মানে বহু প্রজন্ম ধরে একই ধরনের মানুষ বা প্রাণী থেকে বংশবৃদ্ধি। গ্রামের মানুষ একে অপরকে বিয়ে করে। ফলে এখানে প্রতিবন্ধী বাচ্চার জন্ম বেশি হয়। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আরো জানিয়েছেন, কিছু স্থানীয় বাসিন্দা ‘সেরিবেলার অ্যাটাক্সিয়া’ (এক ধরনের মস্তিষ্কের রোগ, যা শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে) লক্ষ করা গেছে।

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের প্রধান লিজা জে শাপিরো ওয়াশিংটন পোস্টে নিশ্চিত করেন, ‘সেরিবেলার অ্যাটাক্সিয়া’ রোগটি গ্রামবাসীদের ভারসাম্য বোধ জটিল করে তোলে। তা মানিয়ে নিতেই সেখানকার মানুষকে চারটি অঙ্গে ভর করে চলতে হয়।

গবেষকদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সোহু জানায়, গ্রামটি একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত, পরিবহন ব্যবস্থা অনুন্নত- তাই এটি বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে সুস্থ শিশুরা স্বাভাবিকভাবে (দুই পায়ে) হাঁটা কখনো দেখেননি। তারা তাদের বাবা-মার কাছ থেকে শুধু দুই হাত এবং দুই পা দিয়ে নড়াচড়া শিখেছে। সময়ের সঙ্গে এভাবে পথচলা এখানকার মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close