প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প

কেন এত প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি

সিরিয়ার সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে আঘাত হানা বড় ধরনের ভূমিকম্পে বহুসংখ্যক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। গত সোমবার তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ শহরের কাছে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর আরো বেশ কয়েকটি আফটারশক বা ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে একটি কম্পন ছিল মূল ভূমিকম্পের মতোই শক্তিশালী। এসব ভূকম্পনে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ভৌত অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু কেন এত ক্ষতি, এত প্রাণহানি, এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এর কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

কেন এত ভয়াবহ ছিল? এটি একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প ছিল। যার মাত্রা ছিল ৭.৮, যেটি ‘উল্লেখযোগ্য’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। ফল্ট লাইন বরাবর প্রায় ১০০ কিলোমিটার আঘাত হেনেছে এবং এর কারণে ভবনগুলোতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশনের প্রধান অধ্যাপক জোয়ানা ফাউর ওয়াকার বলেছেন, ‘যেকোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। গত ১০ বছরের মধ্যে মাত্র দুটি ভূমিকম্প এ মাত্রার ছিল, আর এর আগের ১০ বছরে মাত্র চারটি ভূমিকম্প এ মাত্রার ছিল।’ তবে শুধু কম্পনের শক্তির কারণেই এত বেশি ধ্বংসযজ্ঞ হয়নি। এ ঘটনাটি ঘটেছে ভোরের দিকে, যখন মানুষ ঘরে ঘুমাচ্ছিল। এ প্রশ্নে ভবনের কাঠামোর দৃঢ়তাও একটি বিষয়।

পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলকানো অ্যান্ড রিস্ক কমিউনিকেশন বিভাগের রিডার ড. কারমেন সোলানা বিবিসিকে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত দক্ষিণ তুরস্ক এবং বিশেষ করে সিরিয়ায় বাড়িঘর ও স্থাপনার অবকাঠামোগুলো খুব একটা ভূমিকম্পপ্রতিরোধী নয়। এটিও এই ভয়াবহ হতাহতের কারণ।’

এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে গত দুইশো বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে কোনো বড় ভূমিকম্প হয়নি বা কোনো সতর্কতা সংকেতও ছিল না। তাই প্রায়ই ভূমিকম্প মোকাবিলা করে এমন অঞ্চলের তুলনায় এখানকার প্রস্তুতির মাত্রা বেশ কম।

ভূমিকম্পের কারণ কী? পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ আলাদা বিট দিয়ে গঠিত, যাকে প্লেট বলা হয়, যা একে অপরের পাশাপাশি অবস্থান করে।

এই প্লেটগুলো প্রায়ই নড়াচড়া করার চেষ্টা করে। কিন্তু পাশে থাকা অন্য আরেকটি প্লেটের সঙ্গে ঘর্ষণের মাধ্যমে এই নড়াচড়া প্রতিরোধ করা হয়। তবে চাপ বেশি বেড়ে গেলে কখনো কখনো একটি প্লেট হঠাৎ করে ঝাঁকুনি দেওয়ায় ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগ সরে যায়। এবার এরাবিয়ান প্লেটটি উত্তর দিকে সরে যায় এবং উত্তর দিকে সরে যাওয়া আনাতোলিয়ান প্লেটে গিয়ে ধাক্কা দেয়। প্লেটগুলোর এ ধরনের ঘর্ষণের কারণে এই অনেক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে।

ভূ-অভ্যন্তরে টেকটনিক প্লেটের সঙ্গে আরেক টেকটনিক প্লেটের এ ধরনের ধাক্কার কারণে ১৮২২ সালের ১৩ আগস্ট ৭.৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যা কম্পনের দিক থেকে সোমবার হয়ে যাওয়া ভূমিকম্পের তুলনায় বেশ কম ছিল।

তা সত্ত্বেও, ওই ভূমিকম্পের ফলে এলাকার শহরগুলোর প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল, শুধু আলেপ্পো শহরেই সাত হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। ক্ষতিকর আফটারশক প্রায় এক বছর ধরে চলতে থাকে।

তুরস্কে বর্তমান ভূমিকম্পের পর এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আফটারশক হয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি এই অঞ্চলে এর আগে হওয়া ভূমিকম্পের মতোই হবে।

কীভাবে ভূমিকম্প পরিমাপ করা হয়? মোমেন্ট ম্যাগনিটিউড স্কেল (এম ডব্লিউ) নামে ভূমিকম্প পরিমাপ করার একটি স্কেল আছে। এটি এর আগে ভূমিকম্প মাপার যন্ত্র হিসেবে পরিচিত রিখটার স্কেলকে প্রতিস্থাপন করেছে। রিখটার স্কেলকে এখন পুরোনো এবং তেমন নির্ভুল নয় বলে বিবেচনা করা হয়। ভূমিকম্পের যে সংখ্যাটি দেওয়া হয়, তা দিয়ে ফল্ট লাইন কতটুকু সরেছে এবং যে গতি এই সরানোর পেছনে কাজ করেছে সেটি নির্দেশ করে। ২.৫ বা তার কম কম্পন সাধারণত অনুভূত হয় না, তবে যন্ত্রে ধরা পড়ে। পাঁচ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয় এতে সামান্য ক্ষতি হতে পারে। ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প বেশ শক্তিশালী বলে ধরা হয় এবং এতে মারাত্মক ধরনের ক্ষতি হয়। যেমনটি তুরস্কে এবার হয়েছে।

৮ মাত্রার বেশি কোনো ভূমিকম্প যেকোনো কিছুর ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে এবং এর কেন্দ্রে থাকা মানুষ ও স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে পারে।

এর চেয়ে বড় ভূমিকম্পগুলো কী? জাপানের উপকূলে ২০১১ সালে ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যার কারণে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, এর কারণে সুনামি হয়েছিল এবং উপকূলের কাছে থাকা একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৬০ সালে চিলিতে। সেখানে ৯.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close