চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

বিভিষণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন পল্লীবিদ্যুতের

থমকে আছে বোরো আবাদ সেচের অভাবে মাঠ চৌচির

সাদিকুল ইসলাম। নিজের ৫ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেই কোনো রকমে চলে তার সংসার। গত বছর তার জমিতে ভালো ফলন হয়েছে। সব মিলিয়ে ঘরে তুলেছিলেন ১২৫ মণ ধান। তবে এবার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় সেচ দিতে পারছেন না তারা। তাই সেচের অভাবে থমকে আছে তার জমির আবাদ। মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ধান আবাদের সময়ও চলে যাচ্ছে। কখন জমি তৈরি করবেন, কখন ধানের চারা রোপণ করবেন, শেষ পর্যন্ত সেচের পানি না পেলে হয় তো এবার আবাদই করা হবে না সাদিকুলের। তার চোখে-মুখ জুড়ে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। কাঁদোস্বরে বললেন- ধানের আবাদ না হলে, খাবেনই কী, কীভাবে চলবে সংসার।

শুধু সাদিকুলই নন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা জনপদ বিভিষণের অধিকাংশ মানুষই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এ বছর বোরো আবাদ করতে গিয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছেন এখানকার কৃষক। তাদের জমিতে সেচের জন্য বসানো গভীর নলকূপে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। সেচের অভাবে পতিত পড়ে আছে ৪০ কৃষকের প্রায় দেড় শ বিঘা জমি। এ নিয়ে কৃষকরা জমিতে মানববন্ধনও করেছেন।

কৃষকরা বলছেন, আবাদের সময় শেষ হতে চললেও পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে ঘুরেও তারা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানকার জমি একাধিকবার হাতবদল হয়েছে। সেখানে থাকা গভীর নলকূপের মালিকানা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। একাধিক পক্ষ নিজেদের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ চায়, এসব জটিলতার কারণেই সেখানকার বিদ্যমান সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।

বিভিষণ গ্রামের মজিবুর রহমান জানান, নওগাঁ জেলার সাদরুল আমিন চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির জমি ছিল ওই এলাকায়। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১১ সালে তার জমিতে সেচের জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করেছিলেন। এরপর তিনি তার অধিকাংশ জমিই বিক্রি করে দেন। সেই সঙ্গে গভীর নলকূপটিও ইব্রাহিম নামের একজনকে হস্তান্তর করেন।

গভির নলকূপটির চালক ইব্রাহিম বলেন, সাদরুল চৌধুরী জমি বিক্রির পর ডিপটি আমাকে স্টাম্প করে দিয়ে দিয়েছিলেন। তবে বিদ্যুতের মিটার পরিবর্তন করা হয়নি। সাদরুল চৌধুরীর নামেই বিল আসত, এভাবেই বিল দিয়ে আসছিলাম। মাসখানেক আগে এক দিন পল্লীবিদ্যুতের লোকজন এসে লাইন কেটে দেন। তখন তারা বলেছেন- ডিপের (গভীর নলকূল) মালিকানা পরিবর্তন করতে হলে আগে অফিসে জানাতে হতো, এখন অফিসে যোগাযোগ করিও। এরপর অফিসে যোগাযোগ করেছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এদিকে পানির জন্য ধান লাগাতে পারছেন না কেউ।

ওই এলাকার বাসিন্দা ও গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান নূহ বলেন, আমার কাছে ৪০-৬০ জন কৃষক এসেছিলেন পল্লীবিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়ায় জমিতে সেচ দিতে না পারার কথা বলতে। পরে আমি নিজে পল্লীবিদ্যুতে খোঁজ নিয়েছি, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া নেই, তবে লাইন ও ডিপের মালিকানা নিয়ে সমস্যা ছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, এক শ-দেড় শ বিঘা জমির আবাদ বন্ধ হয়ে আছে লাইনটা চালু করে দেন। কিন্তু লাইন চালু হয়নি, আমার প্রশ্ন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী এক ইঞ্চি মাটিও যাতে ফাঁকা পড়ে না থাকে সেদিকে খেয়াল করতে বলছেন, এমনকি তিনি বাসাবাড়ির ছাদেও ফসল করতে বলছেন, সেখানে শত শত বিঘা জমি পল্লীবিদ্যুতের সিদ্ধান্তহীনতায় সেচের অভাবে পতিত আছে এটা দুঃখজনক। তারা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে পারতেন, কৃষকদের আবাদের সময় পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কিছুই করেনি।

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে, পল্লীবিদ্যুৎ নাচোলের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সুভন কুমার মহন্ত বলেন, গভীর নলকূপের মালিকানা পরিবর্তন করতে হলে উপজেলা সেচবিষয়ক কমিটি আছে, সেখান থেকে অনুমোদন নিতে হয়।

বিভিষণ এলাকার গভীর নলকূপটি ব্যক্তিগতভাবে সাদরুল আমিন চৌধুরী বসিয়েছিলেন, তার নামেই বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। কিন্তু তিনি গভীর নলকূপের মালিকানা পরিবর্তন করেন। বিষয়গুলো সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। যার কারণে সেখানকার বিদ্যুৎ সংযোগটি বিচ্ছন্ন করা হয়েছিল। তবে আমরা ওই এলাকার কৃষকের চলতি বোরো আবাদের কথা ভেবে, ওই এলাকার চেয়ারম্যান, কৃষকদের প্রতিনিধিসহ সবার সঙ্গে কালকের মধ্যেই বসে, বিদ্যুৎ সংযোগটি দেওয়ার ব্যবস্থা করব।

কৃষকরা যাতে তাদের চাষাবাদ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা খাতুন। তিনি বলেন, গতকালই (রবিবার) আমি বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুতই নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি কৃষকদের সমস্যা কেটে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close