মাসুদ রানা, রৌমারী (কুড়িগ্রাম)

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

এক যুগ ধরে অকেজো রৌমারীর রাবার বাঁধ

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার জিঞ্জিরা নদীতে সেচ সুবিধার জন্য ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার বাঁধ কৃষকদের কোনো কাজেই আসছে না। প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় প্রায় ১২০০ কৃষক সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। কবে নাগাদ এই সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে তাও জানে না ওই এলাকার কৃষক। ভেস্তে যাচ্ছে চাষির স্বপ্ন আর সরকারের প্রকল্প। দীর্ঘ ১৩ বছর পার হলেও অকেজো পড়ে আছে খেওয়ারচর রাবার ড্যাম প্রকল্পটি। অপরদিকে প্রকল্প এলাকায় নদীর দুইতীরের বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে, তদারকির অভাবে নষ্ট হচ্ছে ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য রাবার ড্যামটি। রাবার ড্যামের দুপাশে অনেক বসতবাড়ি রাবার ড্যামের ¯্রােতের তোরে নদীগর্ভে বিলীন হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজলার যাদুরচর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তঘেঁষা খেওয়ারচর এলাকায় জিঞ্জিরাম নদীতে ২০১০ সালে রাবার ড্যাম প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। দুই দফায় এ প্রকল্পে সরকারের ১৪ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। প্রথম দফায় ১২ কোটি ও দ্বিতীয় দফায় আর ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজলার লালকুড়া খেয়াঘাট থেকে খেওয়ারচর রাবার ড্যাম এলাকাটির তিন কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। রাস্তাটি কাঁচা। এর বেশিরভাগ এলাকা চলাচলের অযোগ্য। প্রকল্পের সুরক্ষা ও নদী শাসনের জন্য ২ কিলোমিটার সিসি ব্লক ও রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৮৫ মিটার সেতু। সেতুর দু’পাশের সিসি ব্লক করার কথা। নদীর পূর্ব সাইটটির নিম্ন মানের সিসি ব্লকের কারণে ধ্বসে গেছে। সেতুর নিচে থাকা রাবার ড্যামের ব্যাগটি ফোলানোর অভাবে নষ্ট হতে যাচ্ছে। তবে প্রকল্পটি দেখাশোনার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।

ওই এলাকার কৃষক আবু তালেব, শেখ ফরিদ (সাবেক মেম্বার) ও আমির উদ্দিনসহ অনেকেই অভিযাগ করে বলেন, প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় বেশি দামে তেল কিনে (বোরো) ধানের আবাদ করতে হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে ঠিকাদার আর একটি স্বার্থ্যন্বেষি মহল। তাই সরেজমিন তদন্তপূর্বক অতি দ্রুত রাবার ড্যামটি চালুর দাবি করছি।

খেওয়ারচর রাবারড্যামের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির (পাবসস) সভাপতি ইকবাল হোসেন রিপন বলেন, এই রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় ৪০০ কৃষক সদস্য রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগেও প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এলাকার প্রায় ১২০০ কৃষক ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন ও নলকূপ বসিয়ে চাষাবাদ করছেন। এতে করে ফসল উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। তিনি আরও জানান, সমিতির সদস্যরা প্রকল্পটির কোনো সুবিধা না পাওয়ায় রাবারড্যাম পরিচালনা সমিতিটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণসহ রাবার ড্যাম প্রকল্পটি চালুর দাবি করছি।

রৌমারী উপজলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সোমবার রাবারড্যাম প্রকল্পটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সেচ সুবিধার আওতায় আসবে এলাকার আড়াই হাজার কৃষক ও ২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি। নদীতে মাছ চাষে লাভবান হবেন অনেক কৃষক। তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটি চালু হলে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনের সংখ্যা কমে যাবে। এতে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও অনেকটা কমে আসবে।

উপজেলা প্রকৌশলী যুবায়েদ হোসেন বলেন, রাবার ড্যাম এলাকার নদীর দু’পাশে যে পরিমাণ বাঁধ নির্মাণ করা দরকার, তা না করায় প্রকল্পটি চালু করা যাচ্ছে না। বাঁধ নির্মাণ না হলে রাবার ফুলিয়ে সেচ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কমপক্ষে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করলে এ প্রকল্পের সুফল পাবেন কৃষক। সেতুর দু’পাশের সিসি ব্লক ধসে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ওই নদীতে ড্রেজারে মাটি তোলায় সিসি ব্লকের ক্ষতি হয়েছে। নতুন বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু করা হবে। তিনি আরো বলেন, রাবার ড্যামটির কাজ করা হয়েছে অনেক আগে। তখন আমি ছিলাম না। ফলে আমি আসার পর এ বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close