নুর নবী রবিন

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

নদীভাঙনে দিশাহারা উড়িরচরের মানুষ

পঞ্চাশোর্ধ্ব সোহরাব হোসেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার পুকুরপাড় নদীতে ভেঙে গেছে। জোয়ারের পানি ঢুকছে বাড়ির উঠানে। কয়েক দিনের মধ্যে পুরো বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ২০ বছর ধরে হাড়ভাঙা খাটুনির মাধ্যমে গড়ে উঠা বসতি।

সোহরাব হোসেনের মতো এমন দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার উড়িরচর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। দ্বীপ ইউনিয়নটিতে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, রাস্তা ও আবাদি জমি। নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবন পার করছে অনেক মানুষ।

চর উন্নয়ন ও স্থায়ীকরণ প্রকল্পের তথ্য মতে, গত ১০ বছরে নদীতে ভিটেমাটি হারিয়েছে ৭০০-এর বেশি পরিবার। বিলীন হয়েছে ৪০ হেক্টরেরও বেশি আবাদি জমি।

২৩ বছর বয়সি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে সংসার চালান। সম্প্রতি নদীতে তার বাড়ি ভেঙে গেছে। উড়িরচরের দক্ষিণ দিক থেকে ক্রমবর্ধমান ভাঙন অব্যাহত থাকায় কিছুটা উত্তরদিকে ধার দেনা করে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। রবিবার (২৯ জানুয়ারি) প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত তিনবার নদী আমাদের বাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে নতুন বাড়িটাও ভেঙে যাবে। আমরা গরিব মানুষ; যাব কোথায়?

সালাউদ্দীনদের পাশে ছিল কৃষ্ণ চন্দ্র কাহারের বাড়ি। সন্ধ্যার বাজারে মুড়ি মোয়া, বুট-বাদাম বিক্রি করে চলে তার সংসার। নদীতে বাড়ি ভাঙার পর অর্থের অভাবে নতুন করে বাড়ি করতে পারেননি। তাই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কৃষ্ণ চন্দ্র কাহারের ছেলে সুবল কাহার বলেন, জমি কেনার মতো টাকা নাই, এজন্য একজনে খালি বাড়িতে থাকতে দিছে, তাদের পুকুর দেখাশোনা করি।

উড়িরচরের তীব্র ভাঙনের কারণ হিসেবে বঙ্গোপসাগরের হাতিয়া চ্যানেল ও সন্দ্বীপ চ্যানেলের সংযোগস্থলে স্রোতের প্রবাহ ও তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়াকে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধ জিওব্যাগ ফেলার দাবি করছেন চরবাসী।

সত্তরের দশকে নদীর মাঝে চরটি জেগে উঠে। উড়ি নামের এক ধরনের ঘাস জন্মানোর কারণে উড়িরচর নামকরণ করা হয়। ১৯৮০ সালের পর এখানে বসতি শুরু হয়। সন্দ্বীপের ভাঙন কবলিত ইউনিয়নগুলোর মানুষেরা ভিটেমাটি হারিয়ে উড়িরচরে এসে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে উড়িরচরকে সন্দ্বীপ উপজেলার ইউনিয়ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্থানীয়দের মতে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ এখানে বসবাস করে।

দ্বীপ ইউনিয়ন হওয়ায় চিকিৎসা সুবিধায় অনেক পিছিয়ে আছে চরটি। তবে ৬ মাস আগে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close