ইরফান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

সেই প্রার্থীই নিয়োগ পাচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা লঙ্ঘন করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সেই নির্দিষ্ট প্রার্থীকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের এক নেতার সুপারিশের কারণে আবু ওবায়দা রাহিদ নামের ওই প্রার্থীকে নিতে উঠে পড়ে লেগেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নির্দিষ্ট ওই প্রার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ফল বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত মানের চেয়ে কম। ফলে তাকে নিতে অভিনব উপায়ে এক অননুমোদিত একটি অনুবিধি যোগ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কুবি প্রশাসন। ওই অনুবিধিতে উল্লিখিত যোগ্যতাগুলো নির্দিষ্ট ওই প্রার্থীর রয়েছে। গত ১৭ জানুয়ারি ওই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষা থেকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য চারজন প্রার্থীকে মনোনীত করা হয়। ওই চারজনের মধ্যে আবু ওবায়দা রাহিদও রয়েছেন। বাকি তিনজন হলেন আরিফুল ইসলাম পাটোয়ারী, গৌতম সাহা ও রাবেয়া জান্নাত। এ ছাড়া বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশকৃত তালিকায় ওই প্রার্থীর নাম না থাকলেও রেজিস্ট্রার দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অমান্য করে তালিকায় ওই প্রার্থীর নাম যুক্ত করেছে।

এদিকে পরীক্ষার্থীকে শনাক্ত করা যাবে- এমন কিছু উল্লেখ করা যাবে না লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্রে নির্দেশনার পরও ওই প্রার্থী তার উত্তরপত্রে বিশেষ ‘চিহ্ন’ ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা চলার সময় বিষয়টি ধরা পড়ে। সে সময়ই হল পরিদর্শক পর্যালোচনার জন্য পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে তার স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের শুধু তাদের অংশটুকুই মূল্যায়ন করতে দেওয়া হয়েছে। সার্বিক মূল্যায়ন নিয়ে তাদের কাছে কোনো কিছু জানতে চাওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কয়েকজন বোর্ড সদস্যের সঙ্গে কথা হলে তাদের অন্তত দুজন সার্বিক মূল্যায়নের বিষয়ে তাদের কোনো মতামত জানতে চাওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন। সাধারণত নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা মিলে কাটমার্ক বা পাস নম্বর নির্ধারণ করে থাকেন। নিয়োগ বোর্ডের সভার কার্যবিবরণীতে তা উল্লেখ থাকে। ন্যূনতম ওই নম্বর পাওয়া প্রার্থীদেরই পরবর্তী সময়ে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। এর ফলে কে কত নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ বা অনুত্তীর্ণ হলো তা জানা যায়। তবে মার্কেটিং বিভাগের কাটমার্ক কত নির্ধারিত হয়েছিল এ বিষয়ে জানেন না বোর্ড সদস্যরা। উপাচার্য নিজের মতো করেই প্রার্থীদের মনোনয়ন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বোর্ড সদস্যদের একজন এ বিষয়ে তার থেকে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি মন্তব্য করে আর কথা বলতে রাজি হননি।

এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষা থেকে যেসব প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয় তাদের তালিকা প্রকাশ্যে দেওয়ার রীতি থাকলেও কুবি উপাচার্য সেসবেও বিরত ছিলেন। মনোনীতদের শুধু রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে ফোন করে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অনিয়মের সুযোগ বিস্তৃত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য যে রকম অনিয়ম করছেন, তাতে শিক্ষকের ওপর শিক্ষার্থীদের অশ্রদ্ধা তৈরি হবে। সর্বোচ্চ নির্বাহী হয়ে তিনি একের পর এক অনিয়ম করে যাচ্ছেন। যা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়কেই পিছিয়ে দেবে।

এসব বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম এ বিষয়ে বলেন, আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close