রাজু আহম্মেদ, কুড়িগ্রাম

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩

চরাঞ্চলে ঝরে পড়ছে শিশু

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যান না বলে অভিযোগ উঠেছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের অভাবে দিন দিন বাড়ছে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা। এ নিয়ে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র মতে, জেলায় ১২০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে নদণ্ডনদী অববাহিকার ৪ শতাধিক চরাঞ্চলে ১৬৯টি বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের ছাট কালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর হলোখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক দুর্গম চরের অজুহাতে বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হন না বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আখতার এবং সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস শিক্ষক মিলনায়তনে বসে আছেন। বিদ্যালয়জুড়ে শুধু প্রথম শ্রেণিতেই ৩ জন শিক্ষার্থী আপেল, রঞ্জিনা ও সুমাইয়া বই খাতা নিয়ে বসে আছে। ক্লাসে কোনো শিক্ষক না থাকায় খেলাধুলায় ব্যস্ত এসব কোমলমতি শিক্ষার্থী।

সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন অপর দুই সহকারী শিক্ষক আরজু আরা ও মাহমুদা আখতার। সংবাদকর্মীদের দেখে ঘাবড়ে যান ওই দুই শিক্ষিকা। এই দুই শিক্ষক সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে এলেও হাজিরা খাতায় সকাল ৯টায় স্বাক্ষর করে উপস্থিতি দেখান।

এলাকার আজিজুল, মজিবর, মর্তুজা, খোকা, বজলার রহমানসহ আরো অনেকে বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুল আসেন না। মাঝে মধ্যে এলেও দেরিতে আসেন। যার কারণে বাচ্চারা পড়ালেখায় আগ্রহ হারাচ্ছে। অনেক ছাত্রছাত্রী এরই মধ্যে স্কুল বিমুখ হয়েছে। কারণ ছাত্রছাত্রীরা সময়মতো ক্লাসে এলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। শিক্ষকরা ক্লাসে না আসায় বিরক্ত হয়েই এখন শিশুরা স্কুল আসে না।’

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে দেরিতে আসা সহকারী শিক্ষিকা আরজু আরা জানান, ‘তার নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুজনিত কারণে বিদ্যালয়ে আসতে দেরি হয়েছে।’

বিদ্যালয়ে দেরিতে আসা অপর সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আখতার বলেন, ‘আমার বাড়ি হলোখানায়। স্কুল থেকে অনেক দূরে। যে কারণে স্কুলে আসতে দেরি হয়। তাছাড়া পারিবারিক কাজ সমাধান করে স্কুলে পৌঁছতে একটু আধটু দেরি হয়েই থাকে।’

দায়িত্বরত সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. ইয়াসিন আলী জানান, ‘চর সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দেরিতে উপস্থিতির বিষয়টির অভিযোগ পেয়েছি।’

এ ব্যাপারে কথা হলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, ‘সকাল ৯টার পর শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close