নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

উপবৃত্তির সুফল শিক্ষার্থী উপস্থিতি প্রায় শতভাগ

কুয়াশায় ছাওয়া সকাল। বিদ্যালয় মাঠের এপাশ থেকে ওপাশ ঠিকঠাক ঠাহরে আসে না। মাঠের ভেতর শুধু একটা আবছা অবয়বের নড়াচড়া। কয়েকজন শিশু গোল হয়ে ঘুরছে। দূর থেকে কেউ ডাকছে- ‘মালা, ও মালা...’।

কাছে যেতেই উজ্জ্বল হয়ে উঠল মুখগুলো। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালেও ওদের মুখাবয়বে যেন আলোকিত দিনের আভা। মুন্সীগঞ্জ শহরের মাঠপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে যেন আলোর মেলায় পরিণত করেছে ওরা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক নিলুফা আফরোজ হেসে বললেন, ‘বছরের এই শুরুতে, এমন শীতের দিনেও সব শিশু স্কুলে এসেছে। উপস্থিতির হার এখন প্রায় এক শ ভাগ।’ এই চিত্র শুধু মাঠপাড়া বিদ্যালয়ের নয়। পুরো মুন্সীগঞ্জ শহরই জানান দিচ্ছে, প্রতিটা সরকারি বিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগের চেয়ে এখন অনেক জমজমাট। আজকাল শিশুদের ঝরেপড়া আর অনুপস্থিতি নেই বললেই চলে। বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে সরকারি স্কুলগুলো। আর এজন্য সরকারের উপবৃত্তি কার্যক্রমকে অন্যতম সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করলেন প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা। সম্প্রতি বরিশাল ও ঢাকার কয়েকটি সরকারি স্কুল ঘুরেও এই অভিজ্ঞতাই পাওয়া গেল।

শিল্প কারখানার শ্রমিক ও আলুচাষের কৃষক হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুন্সীগঞ্জে এসে বসত গড়েছেন লাখো মানুষ। একটা সময় তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠাত না। তার চেয়ে ছেলে বা মেয়েটিকে কাজে দেওয়াই লাভজনক মনে করত।

ওই মানসিকতার বিপুল পরিবর্তন এনেছে উপবৃত্তি। মুন্সীগঞ্জ সদরের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাম্মাৎ নাসিমা খানম বলছিলেন, ‘এটা মূলত একটা শিল্প এলাকা। এখানে এ ছাড়া প্রচুর আলু চাষ হয়। ফলে বাইরে থেকে অনেক শ্রমিক ও কৃষক আসেন। তাদের পরিবারগুলো থেকে আগে শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে কম আগ্রহ পেত। এখন আমরা জরিপ করে দেখতে পাই, এসব পরিবারের সব শিশু বিদ্যালয়ে আসছে। এর কারণ অবশ্যই উপবৃত্তি।’

এ রকমই একটি পরিবার আক্কাস আলীর পরিবার। তার আদি বাড়ি যশোর। তিনি এখানে একটি কারখানায় চাকরি করেন। একমাত্র সন্তান আয়েশা সিদ্দিকী বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। এই মেয়েকে স্কুলে দেওয়ার কথা তিনি ভাবতেও পারতেন না। কিন্তু সরকার থেকে উপবৃত্তি পাওয়ায় আক্কাস এখন তার মেয়েকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন।

আয়েশার মা সুলতানা বলছিলেন, ‘আগে তো মাইয়াডারে স্কুলে পাঠানির কথা ভাবতাম না। আমাগো সেই সামর্থ্যও ছিল না। কিন্তু এহন সরকার আরো অনেক সুবিধা দিচ্ছে আমার প্রতিবন্ধী মাইয়ারে। আর স্কুলেও এহন উপবৃত্তি দিতেছে। সরকারে আমার ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নাই। নগদরেও অনেক ধন্যবাদ।’

আয়েশার মতো উপকারভোগীরা উপবৃত্তি কার্যক্রম ঠিকঠাক চালিয়ে নেওয়ার জন্য নগদকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। নগদ ২০২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে উপবৃত্তি বিতরণ করছে। তারা ব্যাপারটা শুধু যে পুরোপুরি ডিজিটাল করেছে, তা-ই নয়। এখন উপবৃত্তি না পাওয়ার অভিযোগ নেই বললেই চলে।

এ কারণেই নগদ নিয়ে বলতে গিয়ে মোসাম্মাৎ নাসিমা খানম বলছিলেন, ‘মোবাইল সেবা নগদ এই সেবাটা দিচ্ছে। তারা খুব ভালোভাবে কাজটা করছে। আমার এই উপজেলায় খুব স্বচ্ছতার সঙ্গে উপবৃত্তি বিতরণ হচ্ছে। অনিয়ম দেখছি না। এখানে শিশুরা খুব ভালোভাবে টাকা পাচ্ছে। ফলে আমি নগদকে ধন্যবাদ দেব। আশা করব, এভাবেই তারা দেশের শিক্ষার জন্য কাজ করে যাবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close