আরিফ খাঁন, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)

  ২২ জানুয়ারি, ২০২৩

নিশ্চিহ্নের পথে জমিদার বাড়ি

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ঐতিহাসিক ক্ষেতুপাড়া গ্রামের ৩০০ বছর আগের জমিদার বাড়িটির শেষ চিহ্ন হিসেবে থাকা মন্দিরটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ভেঙে যাচ্ছে, লতাপাতায় ঘিরে ধরেছে এই মন্দিরটিকে। বর্তমানে জমিদার বাড়ির শেষ চিহ্নটুকু ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। বাড়ির সঙ্গে বাজার হওয়ায় বাড়িটির প্রধান প্রবেশদ্বার ভেঙে তোলা হয়েছে দোকানঘর। ১০ বিঘা জমির ওপর তৈরি এ বাড়িটির অবশিষ্ট থাকা অংশটুকু পুনরায় সংস্কার করলে ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়ির স্মৃতিটুকু ধরে রাখা যেত বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। তবে সংস্কার ও যত্নের অভাবে পুরোনো এই জমিদার বাড়ি ও মন্দির এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।

প্রায় ৩০০ বছর আগে ভারতবর্ষের কোনো এক দূরের এলাকা থেকে নব কুমার নামে এক জমিদার এসে সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামে অবস্থান নেন। সেখানে তিনি একটি বাড়ি নির্মাণ করে ১৫৪টি তৌজি নিয়ে তার জমিদারি পরিচালনা করতে থাকেন। জমিদার নব কুমার রায় মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র ছেলে পার্বতী চরণ রায় ৬০ বছর এখানে জমিদারি করেন।

জমিদার নব কুমার সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা না গেলেও তার ছেলে পার্বতী চরণ রায় সম্বন্ধে জানা যায়, তিনি ভারতের কাশীতে বিয়ে করেন। বিবাহিত জীবনে চার পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। পুত্ররা হলেন হেমন্ত রায়, রামাচরণ রায়, শ্যামা চরণ রায় এবং বামা চরণ রায়। বাবা পার্বতী চরণ রায় মারা যাওয়ার পর তিন পুত্র ভারতে চলে গেলেও এক পুত্র শ্যামা চরণ রায় সাঁথিয়ায় থেকে যান। শ্যামা চরণ রায় মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র ছেলে দীপক কুমার রায় সংসারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে দীপক কুমার রায় জমিদার বাড়িটি বিক্রয় করার ঘোষণা দিলে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের সন্ধ্যা রানী বাড়িটি ক্রয় করেন।

বাড়িটিতে সন্ধ্যারানী ও তার স্বামী জ্ঞানেন্দ্র নাথ তালুকদার মারা যাওয়ার পর তাদের চার ছেলে উত্তম তালুকদার, গৌতম তালুকদার, অরুণ তালুকদার এবং অলক তালুকদার বর্তমানে বসবাস করছেন। জানা যায়, সন্ধ্যারানী বাড়িটি ক্রয় করার পর ১৯৩৮ সালে একবার বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছিল। বর্তমানে বাড়ির বাসিন্দারা অর্থাভাবে সংস্কার করে জমিদার বাড়ির চিহ্নটুকু টিকিয়ে রাখতে পারছেন না। বাড়িটিতে অবশিষ্ট থাকা মন্দিরটি সংস্কার করা না হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়ির শেষ চিহ্নটুকু।

জানা যায়, এ জমিদার বংশের অন্যতম প্রাণপুরুষ শ্যামা চরণ রায় একজন বিদ্যানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন। তিনি বর্তমান সাঁথিয়া উপজেলা সদরের সাঁথিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ও সাঁথিয়া কামিল মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জায়গা দানসহ অনেক সেবামূলক কাজ করে গেছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ৩০০ বছর আগের জমিদার বাড়ির ১০ শতাংশ জমির ওপর ভাঙাচোরা পলেস্তরা খসা শিব মন্দিরে গম্বুজ। আছে চার বিঘা জমির ওপর একটি পুকুর। পুকুরের নেই সান বাঁধানো ঘাট নেই বাড়িটির প্রাচীর। বাড়িটির মূল প্রবেশদ্বারের মুখে ছিল বাঘ সিংহের পাথরের মূর্তি সেই প্রবেশদ্বারের জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। একতলা দুইতলা বিশিষ্ট বিশাল অট্টালিকার কিছু ইট ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে এই জমিদারের ইতিহাস দুই একজন প্রবীণ ব্যক্তিছাড়া নতুন প্রজন্মের কাছে অনেকটাই অজানা।

জমিদার বাড়ির এ ব্যাপারে কথা হয় ক্ষেতুপাড়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আলহাজ আবদুল হামিদ মোল্লার সঙ্গে তিনি জানান, আমরা ছোট্টবেলায় দেখছি এই জমিদার বাড়িতে একতলা দুতলার বিশাল কয়েকটি দালান ও পাকা বাঁধা পুকুরও আছিল। বাড়ির চারদিকে আছিল প্রাচীর। এখন তো কিছুই নেই আছে খালি মন্দিরের ভাঙাচোরা মট। তবে আমি মনে করি মন্দিরের ভাঙাচোরা মটটাকেও যদি ঠিকঠাক করে রাখা হয় তাহলে এই জমিদার বাড়ির স্মৃতিটুকু থাকত।

এ ব্যাপারে জমিদার বাড়িতে বর্তমানে বসবাসরত অরুণ তালুকদার বলেন, এটা আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি। আমাদের বেঁচে থাকার তাগিদে সব ভেঙে ফেলে থাকার ঘরসহ দোকান তুলে ভাড়া দিচ্ছি। অনুদান চেয়ে বহুবার অনেকের কাছে লিখিত আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। সরকারি অনুদান পেলে মন্দিরটি পুনরায় মেরামত করে জমিদার বাড়ির চিহ্নটুক রাখা যেত এবং সেখানে আমাদের ধর্মীয় পূজা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারতাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close