মো. সৈকত সোবাহান, বদলগাছী (নওগাঁ)

  ২২ জানুয়ারি, ২০২৩

বটগোহালীই কি গোয়ালভিটা!

প্রাচীন বাংলার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নওগাঁর বদলগাছির সোমপুর বৌদ্ধবিহার। এর অবস্থান বদলগাছির পাহাড়পুরে বলে একে পাহাড়পুর বিহার বলেও অভিহিত করা হয়। পাহাড়পুরের পাশেই বটগোহালী গ্রাম। ওই নামেও একটি মৌজার নামও ছিল। এখন বটগোহালী নামে কোনো গ্রাম নেই। ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি প্রাচীন গ্রামের নাম ছিল বটগোহালী। এই বটগোহালী গ্রামেই একটি প্রাচীন জৈন বিহার ছিল। পাহাড়পুর বিহার খননকালে উদ্ধার করা লিপি থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, পাহাড়পুরের উত্তরের গোয়ালভিটা গ্রামই সেদিনের বটগোহালী।

এই লিপি থেকে জানা যায়, এক ব্রাহ্মণ দম্পতি বটগোহালীতে অবস্থিত একটি জৈন বিহারের ‘অইত’ পূজা ও একটি বিশ্রামাগারের জন্য কিছু জমি দান করেছিলেন। এই জৈন বিহারের প্রধান ছিলেন বিখ্যাত জৈন গুরু গুহ নন্দী। সেই মন্দিরে তার বহু শিষ্য-প্রশিষ্য বসবাস করতেন।

খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে ওই জৈন বিহারটি যে একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ছিল, পা-ুলিপিটি তা প্রমাণ করে। এখানে এখনো যেকোনো জায়গার মাটি খুঁড়লে অনেক প্রাচীন ইটের সন্ধান পাওয়া যায়। এই গ্রামে এখনো রয়েছে কালো পাথর।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বদলগাছীর পাহাড়পুরের উত্তর দিকে অবস্থিত গোয়ালভিটা গ্রামে বাঁশঝাড় নিচে এসব প্রাচীন ইটের সন্ধান দেখা যায়। গ্রামেই রয়েছে কালো বৃহ?ৎ আকৃতির পাথর।

এই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফা বলেন, আজকের গোয়ালভিটা গ্রামটিই যে বটগোহালী গ্রাম সেটা শুনেছি। এই গ্রামের মাটির নিচে রয়েছে প্রচুর ইট। সেগুলোই হয়তো সেই জৈন মন্দিরের ইট।

গোয়ালভিটা গ্রামের মোস্তফা বলেন, এই গ্রামের মাটির নিচে রয়েছে শুধু ইট আর ইট। বেশি দূর খনন করা যায় না। অনেকেই এই ইট দিয়ে বাড়ির প্রাচীর তৈরি করে।

একই গ্রামের জহুরুল (৬০) বলেন, এই গ্রামের নাম ছিল বটগোহালী, এটা শুনেছি। তবে কত বছর আগের সেটি জানা নেই। আরেক ব্যক্তি আফতাব হোসেন বলেন, এই গ্রামে মাটির ওপরে এখনো কালো পাথর আছে। আমার দাদারা গল্প করত এখানে মসজিদের সামনে দুটি পাথর ছিল। স্থানীয়রা এই পাথরের ওপর বসে ওজু করত। কিছু বিদেশি লোকজন সেই মসজিদের পাথর গবেষণা করতে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে লোকমুখে শোনা যায় সেই পাথর দুটি নাকি স্বর্ণের পাথর ছিল।

প্রাচীন বটগোহালী গ্রামের বিষয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক রাজ্জাক জানান, পাহাড়পুর খনন কালে পঞ্চম আব্বাসীয় খলিফা হারুন অর রশিদের শাসনকালের মুদ্রা পাওয়া গিয়েছিল। তিনি আরো বলেন, সোমপুর বিহারের নিচে আরো ইতিহাস লুকিয়ে আছে। যা খনন করলে জানা যাবে।

এ ব্যাপারে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের কাস্টডিয়ান ফজলুল হক আরজু বলেন, এই নামে কোনো গ্রাম আছে কি-না জানি না। আমার চাকরি এখানে বেশি দিন হয়নি। তবে বিহারের উত্তর দিকে ছিল তা আমি জেনেছি। এ ব্যাপারে পূর্বের কাস্টডিয়ান বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে ১৯৯০ সালে দায়িত্বে থাকা কাস্টডিয়ান মাহবুব আলম বলেন, পাহাড়পুর খননকালে পাহাড়পুরের নিচে আরো বিহার আছে বলে জানা গেছে। অন?্য এক বিহারের ওপর আজকের পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার রয়েছে।

তিনি বলেন, আজকের গোয়ালভিটা গ্রামই হয়তো বটগোহালী গ্রাম। এই গ্রামের নিচে প্রাচীনতম সভ?্যতা বিদ?্যমান রয়েছে। গ্রামের মাটি খনন করলে হয়তো অনেক প্রশ্নের মীমাংসা হবে।

এ ব্যাপারে বগুড়া আঞ্চলিক প্রত্নতত্ত্ব কর্মকর্তা নাহিদ সুলতানা বলেন, আমরা ২০০৭ সালে কিছু খনন কাজ করেছি। পাহাড়পুরের নিচে আরো একটি বিহার থাকার সম্ভাবনা বয়েছে। তবে ওই স্থানে নতুন করে খনন করলে আরো ইতিহাস বের হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close