সাহারুল হক সাচ্চু, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ)

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০২২

উল্লাপাড়ায় সরিষা ফুলের সমারোহ

সৌন্দর্যের আড়ালে মৌ খামারির স্বপ্ন

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার দিগন্তজোড়া বিস্তৃত ফসলের মাঠ এখন হলুদ সরষে ফুলে ছেয়ে গেছে। যে দিকেই চোখ যায় শুধু অপরূপ সৌন্দর্যের হলুদ সরষে ফুলের সমারোহ। এবার সরষের ফলন ভালো, তাই চাষির মনে আশার স্বপ্ন। আর এরই মাঝে তৎপর হয়ে উঠছেন মধু খামারিরা। সরষের ভালো ফলন শুধু চাষির স্বপ্ন কিংবা অপরূপ সৌন্দর্যই নয়, এই ফুলের সংগৃহীত মধুও লাভজনক পণ্য। সরিষা ফুল থেকে মৌমাছির মধু সংগ্রহে ঘটে পরাগায়ন, এতে ফলন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরই মধ্যে উল্লাপাড়ায় ১৫০০ মৌমাছির বক্স বসানো হয়েছে। এবার ১৭০ টন মধু উৎপাদনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা।

উল্লাপাড়ায় কৃষকদের কাছে সরষের আবাদ বছরের দ্বিতীয় প্রধান ফসল। এবারের মৌসুমে সরিষা ফসলের আবাদের সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে কমবেশি প্রায় সব জমিতেই সরষের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উধুনিয়া, বড় পাঙ্গাসী ও মোহনপুর ইউনিয়নে বেশি জমিতে সরষের আবাদ হয়েছে।

সেখানকার কৃষকরা সেতি ও মাঘি দুই জাতের সরষের আবাদ করেছেন। মাঘি জাতের সরষের বেশি আবাদ হয়েছে বলে জানা গেছে।

এখন বিভিন্ন এলাকার মাঠে কৃষকরা ভালো ফলনের আশায় ভিটামিন জাতীয় ওষুধ স্প্রে করছেন। উপজেলার সলঙ্গা ইউনিয়নের আঙ্গারু মাঠে কৃষক এরশাদ আলীকে সরষে ফুল আসা জমিতে ভিটামিন জাতীয় ওষুধ স্প্রে করতে দেখা গেছে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রায় তিন বিঘা জমিতে সরষের আবাদ করেছেন। বেশি ফলনের আশায় ভিটামিন জাতীয় ওষুধ স্প্রে করছেন। বাঙ্গালা ইউনিয়নের ভয়নগর গ্রামের ময়দান মিয়া নিজের আবাদ করা বিঘা দুয়েক সরষের জমিতে বেশি ফলনের আশায় ভিটামিন জাতীয় ওষুধ স্প্রে করছেন।

এদিকে সপ্তাহ খানেক ধরে মধু খামারিরা উল্লাপাড়া এলাকা আসা শুরু করেছেন। যেসব মাঠে সরষে ফসলে ফুল আসছে এমন মাঠে তারা মধু সংগ্রহের বক্স বসাচ্ছেন। এরই মধ্যে দশজন খামারি এসেছেন বলে জানা গেছে। উপজেলার গয়হাট্টা ও আঙ্গারু এলাকায় সরিষা ফসলের মাঠে মধু বক্স বসানো হয়েছে। আঙ্গারু মাঠে ১১০টি মধু বক্স বসিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা থেকে আসা খামারি শাহজাহান আলী। এ খামার পরিচালনাকারী আজিজুর রহমান বলেন, সাত দিন হলো মধু সংগ্রহে বক্সগুলো বসানো হয়েছে। এবারের মৌসুমে সরিষা ফুল থেকে ২০ মণ মধু সংগ্রহের আশা তার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন সুমী বলেন, উপজেলার প্রায় সব মাঠেই সরষের আবাদ হয়েছে। সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর বেশি জমিতে সরষের আবাদ হচ্ছে। কৃষি প্রণোদনায় বহু ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে ফলনশীল সরিষা বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকরা বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-৯ জাতের সরষের আবাদ করেছেন। এছাড়াও দেশীয় সেতি ও কালো মাঘি সরিষা আবাদ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, উল্লাপাড়ায় মধু খামারিরা আসছেন। এরই মধ্যে প্রায় ১৫০০ মৌমাছি বক্স বসেছে। তার বিভাগ থেকে এবারের মৌসুমে ১৭০ টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরষের মাঠে মৌমাছির বক্স বসালে ফলনের হার ১০ থেকে ১৫ ভাগ বাড়ে। তার বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মধু উৎপাদনে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close