বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০২২

কক্সবাজারে প্রথমবার ফ্লিট রিভিউ

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ’ (আইএফআর ২০২২) উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজারের ইনানিতে বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে আইএফআর-২০২২ এর উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান, অংশগ্রহণকারী নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড প্রধান, প্রতিনিধি, অন্যান্য সামরিক ও অসামরিক সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংঘাত নয়, সমঝোতা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য নয়। আমাদের লক্ষ্য শান্তি স্থাপন ও শান্তি বজায় রাখা।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো যুদ্ধ মানবজাতির জন্য কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তা বুঝিয়ে দিচ্ছে। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকনির্দেশনায় আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। জাতি হিসেবে আমরা সর্বদা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। সেই নীতি মেনেই আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিকট প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক সব দেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বিদ্যমান।

নিকট অতীতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন দেখাতে সক্ষম হয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত মতপার্থক্য সৌহার্দপূর্ণভাবে সমাধানের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে আমরা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। এই বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে তিনটি দেশেরই সুনীল অর্থনীতি বিকাশের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি আমরা করতে পেরেছি।

অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি বাংলাদেশ আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিগত দুই দশক ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরণকারী দেশগুলোর একটি। ২০১০ সাল থেকে সুদূর ভূমধ্যসাগরের লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ মোতায়ন রয়েছে। এসব কার্যক্রম বিশ্ব শান্তির প্রতি আমাদের অঙ্গীকারেরই বহিঃপ্রকাশ।

ভারত মহাসাগরের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহুলাংশে বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ হয়ে থাকে সমুদ্রপথে। অবাধ বৈশ্বিক বাণিজ্যের স্বার্থেই সমুদ্রকে নিরাপদ রাখা আবশ্যক। সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও অনুসন্ধানের বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের সরকার সমুদ্র সম্পদের এই অপার সম্ভাবনা উপলব্ধি করে বাংলাদেশের সামুদ্রিক খাতের উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে সমৃদ্ধ অর্থনীতি কেবল তখনই সম্ভব, যখন আমরা সমুদ্রে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব। সে লক্ষ্যে আমরা আমাদের সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় পরিকল্পিত সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গুণগত উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন করে যাচ্ছি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে কক্সবাজারে আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ ২০২২’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো ‘আইএফআর ২০২২’ আয়োজন করার জন্য আমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি অংশগ্রহণকারী সব দেশ, বিভিন্ন দেশের নৌপ্রধান ও প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close