কুবি প্রতিনিধি

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০২২

অভিনব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল চান কুবি শিক্ষকরা

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ‘অভিনব’ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রশাসন। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি কোনোভাবেই বিধিসম্মত নয় বলে মন্তব্যও করেছে ইউজিসি। একইসঙ্গে দুই নীতি অনুসরণ করে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের এ বিজ্ঞপ্তি বাতিল চেয়ে গত ২৭ নভেম্বর উপাচার্য বরাবর চিঠি দেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

তবে শিক্ষকদের চিঠি প্রাপ্তি স্বীকারের অনুলিপি দেওয়া হয়নি উপাচার্যের কার্যালয় থেকে। এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘আমার কাছে চিঠি আসা মানেই গ্রহণ করা। ব্যস্ততার জন্য হয়তো তারা (উপাচার্যের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা) স্বাক্ষর করতে পারেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকদের পক্ষে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ২ নভেম্বর প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগের এক বিজ্ঞপ্তিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি বিশেষ শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। শর্তটি হলো এমফিল/সমমান বা পিএইচডি ডিগ্রিধারী অথবা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম দুই বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ স্বীকৃত জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ আছে, এমন প্রার্থীদের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক নির্ধারিত যোগ্যতা প্রযোজ্য হবে।

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন শর্ত আরোপ করতে হলে তা অবশ্যই বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি, অনুষদের নির্বাহী কমিটি, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশ ও সর্বোপরি সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে করা আইনসংগত। অথচ এই বিশেষ শর্তটি উল্লিখিত ফোরামগুলোর কোথাও আলোচিত বা অনুমোদিত হয়নি। যা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রচলিত শর্তের পরিপন্থি। এছাড়া ইউজিসির নির্দেশিকায়ও উল্লিখিত যোগ্যতাকে অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচনা করে এজন্য বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলের শর্ত কোনোভাবেই শিথিলযোগ্য হবে না বলা হয়েছে।

শিক্ষকদের চিঠিতে আরো বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬ এর ধারা ১৯ এর উপ-দফা ২ এর ‘ঝ’ ও ‘ফ’ তে উল্লেখ আছে, নিয়োগের যেকোনো শর্ত সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। উল্লিখিত বিশেষ শর্তটি সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি। ফলে বিজ্ঞপ্তিটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যা ইউজিসিও পৃথক একটি পত্রে উল্লেখ করেছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, ইউজিসি কর্তৃক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়নের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণের নির্দেশিকা প্রেরণ সংক্রান্ত পত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, (কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের) বিদ্যমান নীতিমালায় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নির্দেশিকায় (ইউজিসি প্রেরিত) উল্লিখিত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার চাইতে বেশি বা একই থাকলে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়নের নীতিমালা প্রণয়ন আবশ্যক নয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের শর্ত ইউজিসি কর্তৃক নির্ধারিত শর্তের চেয়ে বেশি। তাই ইউজিসি নির্ধারিত শর্তটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়।

চিঠিতে সচেতন শিক্ষকরা বলেন, তড়িঘড়ি করে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রকাশিত এমন বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে না। এতে তুলনামূলকভাবে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুযোগ পাবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান বিনষ্ট হবে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘চিঠিটি এখনো পড়ার সময় পাইনি। এটি সম্ভবত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ছিল। আমরা গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ওই শর্তটি যুক্ত করেছি। এতে ইউজিসির শর্তের ব্যত্যয় ঘটেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান নীতিমালায় ওই শর্ত নেই এবং ইউজিসির নির্দেশিকা এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস করা হয়নি। তাহলে সে নির্দেশিকা কীভাবে অনুসরণ করলেন? এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা একটি (নতুন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য) কমিটি গঠন করেছি। এটি শুধুমাত্র একটি প্রতিবেদনের বিষয়। যেকোনো সময় এটি পাস হয়ে যাবে।’

উল্লেখ্য, নভেম্বরের মাঝামাঝিতে এ নিয়োগ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশ করে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম। সংবাদে বলা হয়, নির্দিষ্ট এক প্রার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকায় একই সঙ্গে দুই নীতি অবলম্বন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কুবি। এ বিজ্ঞপ্তি কোনোভাবেই বিধিসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close