মিজান রহমান

  ০৫ ডিসেম্বর, ২০২২

শর্তের জালে আটকে গেছে দেবর-ভাবির ঐক্য

অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সাংগঠনিক জটিলতা থেকে বের হতে পারছে না জাতীয় পার্টি। শর্তের বেড়াজালে আটকে গেছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপার ঐক্য প্রক্রিয়া। দেবর-ভাবির এক টেবিলে নাশতার মধ্য দিয়ে প্রকাশ্য বিরোধের সাময়িক অবসান হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। শর্ত-পাল্টাশর্ত, বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরানো ও জি এম কাদেরের মামলা প্রত্যাহারসহ আগামী নির্বাচনে দলটি অবস্থান নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় দলের শীর্ষনেতারা। দলের বিভিন্ন সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জাপার শীর্ষ এক নেতা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেছেন, গত মঙ্গলবার রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের এক টেবিলের নাশতার পর অনেকে ভাবছিলেন, দলের সম্মেলন আহ্বানকে কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে তা মিটে যাবে। তবে বাস্তবে এ ঐক্য প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ জাপার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দায়িত্ব পালনে জি এম কাদেরের ওপর নিম্ন আদালত গত ৩০ অক্টোবর যে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা আগামী ৩ জানুয়ারি ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এতে দলের ঐক্য নিয়ে নেতাকর্মীরা আশাবাদী হয়ে ওঠেন। কিন্তু এক দিনের মাথায় গত বুধবার পরিস্থিতি পাল্টে যায় রওশন এরশাদের অনুসারী জিয়াউল হক মৃধার এক আবেদনে। তিনি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেন। ফলে এ সময়ে জি এম কাদের জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এ সময় তিনি বলেন, রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের কোনো বিরোধ নেই। বিরোধ দেবর-ভাবিকে কেন্দ্র করে দুটি বলয়ের। এদের স্বার্থের সমাধান ও দুই বলয়ের কিছু শর্ত পূরণ হলেই এই দল ঐক্যবদ্ধ করা যাবে। আর যদি না হয় তাহলে জাপার আবার ভাঙনে দিকে যাবে।

এদিকে গত ৩০ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞায় হাইকোর্টের জারি করা স্থগিতাদেশ ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেন। চেম্বার আদালতের এই আদেশের ফলে জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞার আদেশ বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন জিয়াউল হক মৃধার আইনজীবী ব্যারিস্টার সাঈদ আহমেদ রাজা।

এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক বলেন, বহিষ্কৃত হয়ে যারা মামলা করেছেন, তারা ভেবেছিলেন আমরা তাদের ডেকে দলে আনব। এর কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দুজনকেই কিছু লোক ভুল বুঝিয়েছিল। কাদের ভাইকে যেমন কিছু লোকে কথা বলে ম্যাডামের কাছ থেকে দূরত্ব সৃষ্টি করেছিল, তেমনি ম্যাডামের কাছেও দু-একজনে নানা কথা বলে দূরত্ব বাড়িয়েছিল। এদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করতে পারলে কিছু লোক ফায়দা নিতে পারে। দলের অন্যতম কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, একটা দলে বহু চিন্তাধারার মানুষ থাকে। কিন্তু ফাইনালি একত্রেই চিন্তাভাবনা হয়। আমরা চাচ্ছি জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

এদিকে শনিবার রাতে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন জাতীয় পার্টির সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলনসহ বেশকিছু তরুণ নেতা। ওই অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির সবস্তরের নেতাকর্মী ও নবাগতদের উদ্দেশে বেগম রওশন এরশাদ বলেন, তোমাদের মনে রাখতে হবে গ্রামের মানুষের কল্যাণের জন্যই এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, নিজ ঘরে (জাতীয় পার্টি) ফিরে এসে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি।

বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্ বলেন, কোনো ধরনের পৃথক বলয় বা গ্রুপিং সৃষ্টি করা যাবে না। এজন্য দরকার নেতৃত্বের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।

জাতীয় পার্টি ও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, পার্টিকে সুসংগঠিত করতে হবে, শক্তিশালী করতে হবে। মান অভিমান ও ভুল বোঝাবুঝি পেছনে ফেলে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিয়ে যেতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close