হাসানুজ্জামান তুহিন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)
আশ্রয়ণে বরাদ্দ পাওয়া ঘর অন্যের কাছে বিক্রি
শাহজাদপুরে গাড়াদহ ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪ ঘরের মধ্যে ৭টি বিক্রির করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘরগুলো সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ঘর নির্মাণ ও বরাদ্দের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই রয়েছে নানা অভিযোগ। সব ক্ষেত্রেই প্রশাসন রয়েছে নীরব ভূমিকায়। এমন কি প্রকল্প তালিকায় ভুল মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে যেন তাদের সঙ্গে কেউ যোগযোগ করতে না পারে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ দক্ষিণপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলো যথাসময়ে বরাদ্দও দেওয়া হয় প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের পছন্দের সুবিধাভোগীদের মধ্যে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৭টি ঘর স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে কেনাবেচার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্রেতারা ক্রয় সূত্রে বাস করছেন প্রকল্পের ওই ঘরগুলোতে। একটি ঘর নির্মাণে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। পাশাপাশি ঘরের জন্য জমি তো বরাদ্দ রয়েছেই। অথচ জমিসহ প্রকল্পের ওই ৭টি ঘর বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকায়। এ নিয়ে চলছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাসহ পুরো ইউনিয়নবাসীর মধ্যে নানা সমালোচনা।
সূত্রগুলো জানায়, গাড়াদহ দক্ষিণপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪নং ঘর বরাদ্দ হয়েছে আবদুল ছালাম ও তার স্ত্রী সিরিনা বেগমের নামে। তারা ঘরটি ১ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন এবং স্ট্যাম্পে দলিল করে দিয়েছেন। ১০নং ঘরের বরাদ্দপ্রাপ্ত বেল্লাল হোসেন ও ছাড়া খাতুন দম্পতির কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকায় ঘরটি কিনে বাস করছেন আনু ও সাবিনা বেগম দম্পতি। ৮নং ঘর রশিদ দম্পতি পেলেও ওই ঘরে বসবাস করছেন জাহের তার পরিবার নিয়ে। ৯নং ঘর ঠাণ্ডু দম্পতি পেলেও সে ঘর ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বাস করছেন পিঞ্জিরা খাতুন তার সন্তানদের নিয়ে। ১৩নং ঘর রফিকুল ও মোছা. ফুলমালা দম্পতি পেলেও ১ লাখ টাকা দিয়ে কিনে বসবাস করছেন নাজমুল তার পরিবার নিয়ে।
১৬নং ঘর বিধবা রেশমা খাতুন পেলেও সে ঘর ১ লাখ টাকায় কিনে বসবাস করছে হাফিজুল নাছিমা দম্পতি। ১৭ নং ঘর জহুরুল ইসলাম ও আফরোজা বেগম দম্পতি পেলেও সে ঘর ১ লাখ ১১ হাজার টাকায় কিনে হালিমা বেগম তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। প্রকল্পের ওই ৭টি ঘর টাকা দিয়ে কিনে বসবাসের কথা স্বীকার করে তারা বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি কিছু নেই, আমাদের সহযোগিতা করার কোনো মানুষ নেই, তাই দৌড়াদৌড়ি করেও একটা ঘর পাইনি। তাই স্ট্যাম্পে দলিল করে ঘর কিনে বসবাস করছি।
ঘর বিক্রির বিষয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে মুঠোফোনে সাংবাদিক পরিচয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা পরিচয় শুনে ফোন কেটে দেন। পরিচয় গোপন করে ১৪নং ঘরের সুবিভাভোগীকে মুঠোফোনে ফোন দিলে আবদুল ছালামের স্ত্রী সেলিনা বেগম ঘর বিক্রির বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি আরো বলেন, ঘর বিক্রির একটি টাকাও পাইনি সব ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতনের (কেজি স্কুল) মালিক জুয়েল আহম্মেদ নিয়েছে। সে জানে এগুলো বিষয়ে, বলে ফোন কেটে দেন। অপরদিকে জুয়েল আহম্মেদ একটি টাকাও নেননি বলে জানান প্রতিবেদককে কিন্তু তিনি একটি ঘর কেনাবেচার সময় ছিলেন বলে স্বীকার করেন।
গাড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই প্রকল্পের বরাদ্দ, নির্মাণ ও কোনো ধরনের সুপারিশের সঙ্গে আমি যুক্ত নই। এই প্রকল্পের ঘরগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে নির্মাণ ও বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে, ঘর বিক্রির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, যাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কেবলমাত্র তারাই ঘরে বসবাস করতে পারবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই। সরকারি আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি করা আইনত অপরাধ। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক তাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নতুন সুবিধাভোগীদের মাঝে ঘরগুলো হস্তান্তর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
"