খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

  ০৩ ডিসেম্বর, ২০২২

পাহাড়ের ভূমি সমস্যা নিরসন করার দাবি

মহালছড়িতে জেএসএসের গণসমাবেশ

‘পাহাড়ের ভূমি সমস্যা নিরসনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন করে দ্রুত বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা হোক। ভূমি বেদখল বন্ধ করার মাধ্যমে, চুক্তির আলোকে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি কার্যকর রাখতে হবে। আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার কার্যাবলি ও ক্ষমতা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কেন হস্তান্তর করা হচ্ছে না। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তিবিরোধী শক্তিকে মদদ দিয়ে পাহাড়িদের কণ্ঠরোধ করছে। তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদে সরকারি দলের অনির্বাচিত ব্যক্তিদের বসিয়ে পাহাড়ে দুর্নীতি আর অনিয়মকে উসকে দেওয়া হচ্ছে।’

শান্তিচুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলার মহালছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত করল্যাছড়িমুখ জুনিয়র হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-এম এন লারমা) অংশের নেতারা এসব কথা বলেন।

সাবেক ছাত্রনেতা প্রত্যয় চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পঁচিশ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু এই সুদীর্ঘ সময়েও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ ধারাই অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। সংগঠনের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার এক যুগের অধিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো আগের মতোই পড়ে আছে। 

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক সুদর্শন চাকমা বলেন, আজকে পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করছি প্রতিবাদের সঙ্গে। এত বছর পরও সরকার আমাদের ধারাগুলো অমীমাংসিত অবস্থায় ফেলে রেখেছে। জেএসএসের কেন্দ্রীয় সা. সম্পাদক ও মহালছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ গণসমাবেশে সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক প্রণব চাকমা, গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক অমল চাকমা, খাগড়াছড়ি উপজাতীয় ঠিকাদার সমিতির সভাপতি রবিশংকর তালুকদার, জনসংহতি সমিতির রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুরেশ কান্তি চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহসভাপতি প্রীতি খীসা, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সা. সম্পাদক কাকলী খীসা, কেন্দ্রীয় যুব সমিতির সভাপতি জ্ঞানপ্রিয় চাকমা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজন চাকমা বক্তব্য দেন।

এদিকে, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন স¤পর্কিত টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা সম্পন্ন) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, এমপি বলেছেন, পাহাড়ের মানুষ সারা বিশ্বে শান্তি ও সহাবস্থানে কীভাবে থাকতে হয় তার নজির স্থাপন করেছেন। পাহাড়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা ধরে রাখতে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সম্প্রীতি ও এলাকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

পরে তিনি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনের অংশ হিসেবে শান্তির পায়রা ও রংবেরঙের বেলুন উড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির রজতজয়ন্তীর শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। শোভাযাত্রাটি জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন হলে গিয়ে শেষ হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও জীবনধারা তুলে ধরেন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা।

শোভাযাত্রায়, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুর সভাপতিত্বে ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন স¤পর্কিত টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা সম্পন্ন) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, এমপি, খাগড়াছড়ির রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম পিএসসি, ডিজিএফআই কমান্ডার মোহাম্মদ ওয়াদুদ উল্লা চৌধুরী পিএসসি, বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, এএসইউ কমান্ডার কর্নেল চৌধুরী মোহাম্মদ সামসুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন, পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক, খাগড়াছড়ি সেনা সদর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শানে আলমসহ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ দিন বিকেলে ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ, হৃদয় খানসহ স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্প্রীতি কনসার্ট এবং সন্ধ্যায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন, আতসবাজি ও আকাশবাতি ফানুস উড়ানো হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close