সাদমান সময়, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

  ০২ ডিসেম্বর, ২০২২

মিরসরাইয়ে ধান কাটা উৎসব

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গীত-নৃত্যে, পিঠাণ্ডপুলির বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ধান কাটা ও নবান্ন উৎসব। এতে দুই শতাধিক কৃষক-কৃষাণী অংশ নেন। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় উপজেলার ১১নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়ায় জমিতে পাকা আমন ধান কাটার মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট আইটি বিশেষজ্ঞ, চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব মাহবুব রহমান রুহেল। মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টারের উদ্যোগে এই উৎসবে কৃষক ছাড়াও স্থানীয় রাজনীতিবিদ, স্বেচ্ছাসেবকসহ এলাকাবাসী উপস্থিত থেকে উপভোগ করেছেন উৎসব।

উৎসবে গিয়ে দেখা গেছে, শতাধিক কৃষক গায়ে সাদা গেঞ্জি, পরনে লুঙ্গি, মাথায় গামছা ও হাতে কাঁচি নিয়ে ধান কাটার জন্য সড়কের পাশের সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করছেন। প্রধান অতিথি ধান কাটা উদ্বোধন করার সঙ্গে সঙ্গে একসঙ্গে সবাই প্রায় এক একর আমন ধান কাটেন। এরপর এক রঙের শতাধিক নতুন শাড়ি পরিধান করে ছুটে আসেন গ্রামের কৃষাণীরা। কারো হাত খালি নেই। নানা পিঠা তৈরি করেছেন রাতভর। কারো হাতে চিতল, দুধচিতল, পুলি, নকশি, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা, পাখন, তেলের পিঠা হরেকরকমের পিঠা নিয়ে উপস্থিত হন তারা। জমির চারপাশে একতারা ও বাদ্যযন্ত্র হাতে নেচে নেচে গান গাইছেন একদল শিল্পী। সবাই মিলে বাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলেন।

উৎসবে উপস্থিত কৃষক নুরুল মোস্তফা ও স্বপন চন্দ্র নাথ বলেন, আমাদের কৈশোরে এমন উৎসব দেখেছি। এরপর নবান্ন উৎসব একরকম হারিয়ে গেছে, ঘরোয়াভাবে সীমাবদ্ধ ছিল। বহু বছর পর আবার ধান কাটা উৎসবে একত্রিত হলাম, সবাই মিলে ধান কাটলাম অনেক ভালো লাগছে।

উৎসবের উদ্যোক্তা মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, আমাদের গ্রামেও শহরের যান্ত্রিকতা চলে আসছে। হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার সব ঐতিহ্য। তাই হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্যকে ফিরে পেতে আমার এই আয়োজন। তিনি আরো বলেন, নতুন প্রজন্ম জানে না, ধান কাটা উৎসব কী, নবান্ন উৎসব কী নতুন প্রজন্মকে গ্রাম বাংলা সম্পর্কে ম্যাসেজ দিতে এমন আয়োজন করেছি। শতাধিক কৃষককে নতুন লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা ও শতাধিক নারীর জন্য নতুন শাড়ির তৈরি করেছি।

ধানকাটা শেষে মঘাদিয়া নুরুল আবছার চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, আমি ছোটবেলায় দেখেছি আমার দাদারা ধান কাটা নিয়ে অনেক আনন্দ করতেন। এখন তা হারিয়ে গেছে। মঘাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার এমন চমৎকার আয়োজন করা জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, তিন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। অনাবাদি জমি চাষ করতে হবে। আমার কষ্ট লাগে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী লাভবান হয়। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, কৃষক ছাড়া একটি দেশ কোনো ধরনেরই খাদ্যে নিশ্চয়তা দিতে পারে না। তাই কৃষকদের কৃষিকাজে উৎসাহ দিতে বর্তমান সরকার ভর্তুকি ও বিনামূল্যে সার, কীটনাশক ও বীজ সরবরাহ করে আসছে।

আলোচনা সভা শেষে ধান কাটায় চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলকে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close