মিজান রহমান
উত্তরণের পথে জাপার সংকট
দীর্ঘ ৫ মাস থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাশেষে দেশে ফিরছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ। বিরোধীদলীয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানাতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। উচ্চপর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে কর্মীরা উজ্জীবিত।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের মধ্যে যে বিবাদ তা মিটে রওশন দেশে ফেরার পর। সমঝোতা করে একসঙ্গে কাজ করবেন দেবর-ভাবি এমনটাই আশা করছেন জাপার নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির একজন উচ্চপর্যায়ের নেতা বলেন, নানাভাবে আমরা চেষ্টা করছি। দলের চেয়ারম্যার জি এম কাদের ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। টেলিফোনে সব কথা বলা যায় না। রওশন এরশাদ দেশে এসে সব কথা বলবেন। আশা করি, একসঙ্গে বসলে মনোমালিন্য ঘুচে যাবে। এসব নিয়ে আমরা শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছি। রওশন-কাদের কেউই বিভক্ত জাতীয় পার্টি চায় না। তাই আমরা মনে করি নিজেরা উদ্যোগ নিলে এ সংকট কেটে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি সে রকম পরিবেশ থাকে তাহলে বিমানবন্দরে যাব। না হলে পরে আমরা রওশন এরশাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বসব। আশা করি, তখন সব ঝামেলা মিটে যাবে।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সংকট উত্তরণের জন্য কাজ করা হচ্ছে। নতুন ফর্মুলা বের করার চেষ্টা চলছে। রওশন ম্যাডাম দেশে আসার পর হয়তো ঝামেলা মিটে যাবে। সবাই একত্রে কাজ করার চেষ্টা চলছে।
অনেকটা একই কথা বলেন রওশন এরশাদপন্থিরাও। রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত দুই নেতা বলেন, আমরা ম্যাডামের কথায় অনেকটা চুপ হয়েছি। রওশন এরশাদই থাকবেন বিরোধী দলের নেতা। এসব শর্তে আমরা কাউন্সিল ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। এ সময় তার সঙ্গে অবস্থানকারী পুত্র রাহ্গীর আল মাহি (সাদ) এরশাদ এমপি ও পুত্রবধূ মাহিমা এরশাদও দেশে ফিরবেন।
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে উপস্থিত থেকে বিরোধীদলীয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানাবেন জাতীয় পার্টির উচ্চপর্যায়ের নেতারা। উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, পার্টির সিনিয়র নেতা অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, এস এম এম আলম, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সাবেক এমপি ও দলীয় চেয়ারম্যানের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, দলে নবাগত সাবেক এমপি এম এ গোফরান, সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মিলন, পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু ও জাতীয় ছাত্রসমাজের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান টিটুসহ অন্য নেতা।
বিমানবন্দরে নির্ধারিত আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভিআইপি লাউঞ্জ গেটে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন জাপার অভিভাবক বেগম রওশন এরশাদ। এ সময় তিনি সেখানে পনেরো মিনিটের মতো অবস্থান করবেন। বিশ্ব পরিস্থিতি, দেশীয় রাজনীতি, দলে চলমান অস্থিরতা ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছানো বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিষয় তার পরিষ্কার বক্তব্য তুলে ধরবেন। অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের দুর্নীতি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে কথা বলবেন। এসব বিষয় নিজ দলের সঠিক অবস্থান তুলে ধরবেন। একই সঙ্গে বিশেষ দৃষ্টি রেখে আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থান ও লাঙ্গলের প্রার্থী ঘোষণা করবেন রওশন এরশাদ।
বিমানবন্দরে বিরোধীদলীয় নেতাকে সংবর্ধনা জানানো হবে। এজন্য নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এসব বিষয়ে গত দুই দিন পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করেছে। শনিবার বেগম রওশন এরশাদের সুস্থতায় আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করে রাজধানীর গুলশানে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিন পর্যন্ত সড়ক দ্বীপ ও রাস্তার দুপাশে লাগানো হবে বর্ণিল ব্যানার-ফেস্টুন। এছাড়া নগরীজুড়ে লাগানো হয়েছে নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন। দলীয় নেতাকর্মীদের নামে ছাপানো পোস্টারও লাগানো হয়েছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। বিরোধীদলীয় নেতাকে সংবর্ধনায় প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার লোক সমাবেশের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
নানামুখী চাপে সম্প্রতি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। একদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা; অন্যদিকে রওশনপন্থিদের বিরোধী তৎপরতা ভোগাচ্ছে কাদেরকে। বেশ কয়েক দিন ধরে রাজনৈতিক কার্যক্রমও পরিচালনা করতে পারছেন না।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে যোগদান শেষে গত ৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের উদ্দেশে যাত্রা করেন রওশন এরশাদ।
"