মনিরুল ইসলাম

  ২৫ নভেম্বর, ২০২২

কৈশোর পেরিয়ে দুর্বার গাভি

সবেমাত্র ১৮ বছর বয়স। চোখে দুরন্তপনা আর চপলতার ছাপ স্পষ্ট প্রতীয়মান। কিন্তু এই কচিকাঁচা বয়সেই নিজের সহজাত প্রতিভার ঝলকানি দেখিয়ে বিমোহিত করে দিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের। বলছি, স্প্যানিশ উদীয়মান তরুণ তুর্কি; মাঝমাঠের প্রাণভোমরা গাভির কথা। পুরো নাম পাবলো মার্টিন পায়েজ গাভিরা। বন্ধুবান্ধব, সতীর্থরা আদর করে ডাকেন গাভি। তাকে এই নামে-ই বিশ্বব্রহ্মা-ে চিনে।

স্পেনের কোচ লুইস এনরিকে যাদের ওপর ভরসা করে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের মিশনে নেমেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন গাভি। এক বছর আগে কোচ ১৭ বছর বয়সি এই মিডফিল্ডারকে মাঠে নামিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকে। আনাড়ি, আনকোরা এই ফুটবলারের প্রতি কোচের আস্থা গগনচুম্বী। অভিজ্ঞতা বলতে বার্সার হয়ে ৭টি ম্যাচ খেলা। আর সেখানে নিজের অমিত প্রভিতা আর পরিশ্রমের সর্বোচ্চটুকু প্রদর্শন করে কোচের নজর কেড়েছেন। তাতে ভাগ্যলিপি বদলে গেছে। মনের কুঠুরিতে বিশ্বকাপ খেলার যে স্বপ্ন ছিল। সেটার ডালপালা ছড়াতে লাগল।

বুধবার কোস্টারিকার বিরুদ্ধে স্পেন পাসের মায়াজাল বিছিয়ে দিয়েছিল। ১০৫৬ পাসের মধ্যে কমপ্লিট পাস ৯৯৪টি ছিল। কোস্টারিকার ফুটবলারদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতেছিল নিছক। নিখুঁত পাস, লক্ষ্য করে শট। সবকিছুর এক অপরূপ মায়াবী সম্মিলন ঘটিয়েছে। এদিন স্প্যানিশ প্রত্যেক ফুটবলার দুর্দান্ত খেলেছিল। তবে আলাদাভাবে সবার মন জয় করেছেন সদ্য কৈশোর পেরোনো গাভি। কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ৭-০ গোলে জয়ের দিনে ৭৪ মিনিটে গোল করেন গাভি। আলভারো মোরাতার পাস থেকে ভলিতে করা গোলটি ছিল দুই চোখের জন্য প্রশান্তি। আর এই চোখধাঁধানো গোলের মধ্য দিয়ে অভিষেক ম্যাচে সুন্দর এক রেকর্ডের দেখা পান বার্সেলোনার এই তারকা। বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোলের রেকর্ড এখন তার। এর আগে রেকর্ডটি রোমানিয়া ও হাঙ্গেরির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা ফরওয়ার্ড নিকোলা কোভাচের ঝুলিতে ছিল। ১৯৩০ বিশ্বকাপে রোমানিয়ার হয়ে ১৮ বছর ১৯৭ দিন বয়সে অভিষেক ম্যাচে গোলটি করেছিলেন। তার রেকর্ড ভাঙল ১৮ বছর ১১০ দিন বয়সি গাভি। এ ছাড়া বিশ্বকাপ ইতিহাসে তৃৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতাও গাভি। এই রেকর্ড ১৯৫৮ বিশ্বকাপ ১৭ বছর ২৩৯ দিন বয়সে গোল করেন ব্রাজিলের জীবন্ত কিংবদন্তি পেলে।

ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে কোচ লুইস এনরিকে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই স্প্যানিয়ার্ড ফুটবলারের মধ্যে আগামীর তারকা হওয়ার মতো সব রসদই আছে।’

‘আমি আশা করি সে প্রতিটা সময় তার সেরাটুকু দিয়ে খেলবে। আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকেব।’

‘সে অনন্য, সবার থেকে একেবারে আলাদা। কারণ, তার বয়স মাত্র ১৮ বছর। এ বয়সে নিজেকে যেভাবে চিনিয়েছেন। আগামীতে একজন দুর্দান্ত তারকা রূপে দেখা যাবে।’

বয়সের তুলনায় অধিক শানিত এই ফুটবলার যদি নিজেদের এই ছন্দ রাখতে পারে, তাহলে আগামীতে স্পেনের একসময়কার মধ্যমণি ইনিয়েস্তার মতো হয়ে উঠবেন। কারণ, মাঝমাঠের কারিকুরি আর ট্যাকটিক্যাল জায়গায় দুরন্ত। ফাঁকা জায়গা সতীর্থকে বল বাড়িয়ে দেওয়ার তীক্ষèধার দক্ষতা রয়েছে খুব।

গাভি যদি মাঝমাঠ আলোকিত করে তুলতে পারেন। তাহলে তার অদূর ভবিষ্যৎ জ্বলজ্বলে সে কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close