অলিউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  ২৪ নভেম্বর, ২০২২

মহানন্দায় বালুমহাল বন্ধের আবেদন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহানন্দা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বালুহীন বালুমহাল বন্ধের আবেদন জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে এই আবেদন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, মহানন্দা শান্ত প্রকৃতির নদী। এ নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জন্য আশীর্বাদ।

এলাকাবাসীর পক্ষে এই আবেদন করেন সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ। এতে বলা হয়েছে, ভারত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করে গোমস্তাপুর, নাচোল, শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলীত হয়েছে। মহানন্দা নদীর উভয় পাড়ে বহু ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো, পাকা ও আধাপাকা রাস্তাঘাট, আমবাগান ও মূল্যবান ফসলি জমি রয়েছে। অপার সম্ভাবনাময় বরেন্দ্র ও চরাঞ্চলে কৃষি সেচ সম্প্রসারণের জন্য প্রায় ৩০টির মতো সরকারি অর্থায়নে পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড প্রকল্পগুলোর স্থাপনা মহানন্দা নদীর পাড়ে অবস্থিত। এছাড়াও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বহু সেচ প্রকল্প রয়েছে। মহানন্দা নদীর গতিপথ ও নাব্য বজায় রাখার জন্য ৩৬.০৫ কিমি নদী ড্রেজিং করা হয়েছে। পানি সংরক্ষণে দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যাম নির্মাণকাজ চলছে, যা আগামী অর্থবছরে সমাপ্ত হবে।

আবেদনে আরো বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে মহানন্দা নদীতে বালুমহাল ও ইজারাবহির্ভূত অংশ থেকে আইনলঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলন করার ফলে নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শান্ত প্রকৃতির মহানন্দা নদীতে বর্ষা মৌসুমেও উজান থেকে বালু কিংবা পলি বহন করে না। ফলে এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন ও একই বালুমহাল থেকে বালু তুলতে থাকলে নদীর মরফোলজিক্যাল পরিবর্তন হবে ও নদীভাঙন বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে নদীভাঙন রোধ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। ভাঙনের ফলে নদী পাড়ে গড়ে ওঠা বসতবাড়ি, গোবরাতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- দক্ষিণচরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেহুলা-অরুণবাড়ি সড়ক, বেহুলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, হরিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘুঘুডিমা গোরস্থান, গোবরাতলাহাট, চাঁপাই-গোমস্তাপুর জোনাল সড়কের গোবরাতলাহাট এলাকা ভাঙনের মুখে। বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের জেলেপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পলশা উচ্চবিদ্যালয়, নসিপুর, চকঝগড়ু, রামজীবনপুর এলাকা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ লাইন, বিজিবি ব্যাটালিয়ন ও শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে।

এছাড়াও কৃষি সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প যেমন অগ্রণী, দ্বারিয়াপুর, পান্নাবিল, নয়াগোলা মহানন্দা, মহম্মদখানি, শ্রীরামপুর, পলশা মহেশপুর, চাঁপাই গ্রামীণ, গোহালবাড়ি, গোরক্ষনাথপুর, বেহুলা, ঘুঘুডিমা, চেঁচনিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের পানি উত্তোলন স্থাপনা হুমকির মুখে। এরই মধ্যে কয়েকটি সেচ প্রকল্পের স্থাপনা ভেঙে পড়ে এবং নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে। মহানন্দা নদীতে দৃশ্যমান বালু না থাকায় ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে নদীভাঙন বৃদ্ধি পাবে।

আবেদনে সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের দাবি- এর আগে বালু উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার না হওয়ায় উদ্বেগ এবং উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংসদ সদস্য আবেদনে আরো বলেন, বালুমহাল ইজারার নামে, দৃশ্যমান বালুবিহীন নদীর তলদেশ ইজারা দেওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়নমূলক কাজে বালুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিগত কয়েক বছর আগে পদ্মা নদীতে চারটি বালুমহাল সৃজন করা হয়। প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী পদ্মা নদীতে আরো বালুমহাল সৃজন করার সুযোগ রয়েছে। জরিপ পরিচালনা করে বাস্তবতার নিরিখে জনস্বার্থে ভাঙন রোধে মহানন্দা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং বালুবিহীন বালুমহাল বন্ধকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেছেন সংসদ সদস্য। জনস্বার্থে বিষয়টি অতিব জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন বলেন, আমি রাজশাহীতে মিটিংয়ে ছিলাম। সংসদ সদস্যের আবেদনের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে মহানন্দা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close