মেহেরপুর প্রতিনিধি

  ২৪ নভেম্বর, ২০২২

মেহেরপুরে ওএমএস

রাতভর লাইনে, তবু মিলছে না চাল-আটা

মেহেরপুর পৌর এলাকার ওএমএসের ৯টি ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্র আছে। সেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে চাল ও আটা কিনতে উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকে। আর এই ভিড় এড়িয়ে এসব খাদ্যপণ্য কিনতে আগের রাত থেকে লাইনে অপেক্ষা করছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। এভাবে শীত উপেক্ষা করে রাতভর অপেক্ষা করেও কারো কারো ভাগ্যে জুটছে না চাল-আটা। মজুদ শেষ হওয়ায় খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর ঝুঁকি উপেক্ষা করে, খোলা আকাশের নিচে শীতের সারারাত অপেক্ষা করতে গিয়ে অনেকে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। স্বল্প আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না। মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সরকার সাধারণ মানুষের মধ্যে সুলভমূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করছে। সপ্তাহের রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার এই পাঁচ দিন ওএমএস ডিলার পয়েন্টে সুলভমূল্যে চাল-আটা বিক্রি করা হয়। তবে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলছেন ভোক্তারা। খোলাবাজারে মোটা চালের কেজি ৬০ টাকা। সে চাল খাদ্য অধিদপ্তরের ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) মাধ্যমে ৩০ টাকায় কেনা যায়। অন্যদিকে বাজারে আটার কেজি ৭৫ টাকা। লাইনে ১৮ টাকা কেজি পাওয়া যায়। তাও দুদিন আগে কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন লাইনে কিনতে হচ্ছে ২৪ টাকা কেজি দামে। তাও প্রতি ডিলার চাহিদা অনুযায়ী চাল-আটা দিতে পারছে না।

ওএমএসর ডিলারদের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরেজমিনে সোমবার সারারাত ঘুরে দেখা গেছে, রাত ৯টা থেকে মানুষ অবস্থান নিচ্ছেন চাল-আটা পাওয়ার জন্য। যদিও পরের দিন সকাল ৯টায় চাল-আটা দেওয়া শুরুর সময়। রাত ৯টায় মেহেরপুর জেলা শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার ফারুক হোসেনের বিক্রয়কেন্দ্রের কাছে দেখা যায় খোলা আকাশের নিচে একটি গাছের গোড়ায় সিমেন্টের খালি বস্তা পেড়ে খণ্ড খণ্ড হয়ে শুয়ে ও বসে আছেন অনেক নারী। রেহেনা খাতুন নামে মধ্যবয়সি এক নারী জানান, ৩ কেজি আটা অথবা ৫ কেজি চালের জন্য তিনি রাতভর অপেক্ষা করবেন। সকাল ৯টায় তাদের চাল-আটা দেওয়া হবে। রাত ১২টার মধ্যে শতাধিক নারী চলে আসবেন। সকালে এসে যদি না পাওয়া যায়, তাই তারা রাত থেকেই লাইনে রয়েছেন।

মধ্যরাতে এসে লাইনে জায়গা না পেয়ে অনেকে খালি হাতেই বাড়ি ফিরছেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্রে রাত ৩টায় আসেন মাসুরা খাতুন নামের শহরের মাঠ পাড়ার এক মাঝবয়সি নারী। লম্বা লাইন দেখে ক্ষোভ ঝাড়তে ঝাড়তে তিনি বাড়ি ফিরে যান। ভিড় দেখেও অনেকে থেকে যাচ্ছেন। যদি চাল-আটা মেলে এই আশায়।

মেহেরপুর পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের ওএমএস ডিলার নীলমনি হল সড়কের আক্তারুজ্জামান সুমন। তার বিক্রিয়কেন্দ্রের সামনে সোমবার রাত ৩টায় দেখা যায় প্রায় শ-খানেক নারী অবস্থান করছেন। শেফালী খাতুন নামের থানাপাড়ার এক নারী জানান, তিনিসহ অনেকেই রাত ১০টার দিকে এসে লাইনে ব্যাগ রেখে বসে আছেন।

শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টুর বিক্রয়কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় গিয়ে দেখা যায়, ওএমএসের চাল ও আটা কিনতে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সবার চোখে-মুখে ছিল রাত জাগার ক্লান্তির ছাপ। কেউ কেউ সন্ধ্যারাত থেকেই লাইনে ছিলেন। সেখান থেকে চাল ও আটা কেনা রূপালী বেগম জানান, তিনি বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। রাত ৯টায় তিনি লাইনে দাঁড়ান। যখন তিনি আসেন তখন তার সামনে জনা কুড়ি নারী-পুরুষ ছিলেন। তিনি বলেন, সারারাত ঘুমহীন লাইনে থেকে বাসাবাড়িতে কাজ করতে কষ্ট হয়। তিনি আরো জানান, বাজার থেকে ৫ কেজি চাল আর ৫ কেজি আটা কিনতে যে টাকা লাগে তার থেকে ওএমএস কেনায় সাশ্রয় হয় অর্ধেক।

লাইনে থেকেও চাল না পাওয়া এক রিকশাচালক জানান, শুধু শহরের নয়, গ্রাম থেকেও এখানে ওএমএসের চাল-আটা নিতে আসছেন। গত এক মাস থেকে নতুন নতুন মুখের দেখা মিলছে। গ্রামপর্যায়েও খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

সরকারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু নিম্ন আয়ের নয়, মধ্যম ও উচ্চমধ্যম শ্রেণির মানুষেরও ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এজন্য ক, খ ও গ শ্রেণির কার্ডের মাধ্যমে রেশনিং পদ্ধতিতে চাল, ডাল, আটা, চিনি দেওয়া উচিত। এই কর্মকর্তা আরো বলেছেন, অনেক পরিবারে অভাব থাকলেও তারা লাইনে দাঁড়িয়ে ওএমএস সুবিধা নিতে পারছেন না।

দুই নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টু জানান, ‘আমরা ২০০ জনকে দিতে পারি। কিন্তু মানুষ আসেন তিনশোর বেশি। সরকারিভাবে যে চাল বরাদ্দ পাওয়া যায় ৫ কেজি করে ১১১ জনকে দেওয়া যায়। আটার চাহিদা বেশি। এ কারণে ৫ কেজির স্থলে ৩ কেজি করে ১৮৫ জনের কাছে বিক্রি করা হয়। এক মাস ধরে অনেক নতুন মানুষ আসছেন। যারা কখনো চালের জন্য শহরে আসেননি। এ কারণে অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়েও চাল-আটা পাচ্ছেন না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close