মাহমুদুল হাসান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)

  ২৩ নভেম্বর, ২০২২

তিন বছর ধরে বেহাল সড়ক

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের খালগোড়া বাজার থেকে পশুরবুনিয়া হয়ে সেনের হাওলা পর্যন্ত সড়কটির নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। প্রায় চার কিলোমিটার এ সড়কের নির্মাণকাজ ঝুলে আছে তিন বছর ধরে। সড়কটি নতুন নাকি পুরোনো, দেখে বোঝার উপায় নেই। আছে খোয়া বিছানো। এর ফাঁকে একটু পর পরই খানাখন্দ। নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে বেহাল সড়কে দুর্ভোগ নিয়েই চলাচল করছেন যাতায়াতকারীরা। এ সড়কে একবার কেউ যাতায়াত করলে, আরেকবার যেতে চান না। ফলে ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না সড়ক সংশ্লিষ্ট পাঁচ গ্রামের মানুষের।

এলজিইডির উপজেলা কার্যালয় জানায়, ‘বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (পটুয়াখালী ও বরগুনা) প্রকল্পের’ আওতায় রাঙ্গাবালী উপজেলার খালগোড়া থেকে পশুরবুনিয়া আলী আশরাফ ফরেস্টারের বাড়ি পর্যন্ত ৩ হাজার ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যে ও তিন মিটার প্রস্থের এই সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। এমডিএইচ ও এসএইচই নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সড়কটি নির্মাণকাজ করার কার্যাদেশ পান ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর। সড়ক নির্মাণে চুক্তিমূল্য ধরা হয় ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮৩ হাজার ৩০৯ টাকা। ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সড়কটি নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। কিন্তু তিন বছরেও এর কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ ২০২১ সালের জুন মাসে সড়ক নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শতাংশ কাজ হতেই এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়ক নির্মাণকাজ বাবদ ১ কোটি ৩ লাখ টাকার একটি বিল তুলেও নিয়েছেন।

সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটিতে বালু ও ইটের খোয়া ফেলে রোলার দেওয়া হয়। তবে সড়কের অনেক স্থানে ঠিকমতো খোয়া না ফেলা এবং রোলার না দেওয়ায় উঁচু-নিচু রয়ে গেছে। কার্পেটিং না করায় অনেক জাগয়ায় খোয়া ওঠে গেছে। তৈরি হয়েছে খানাখন্দ।

স্থানীয়রা জানান, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সড়কটির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে সড়কের কিছু কিছু জায়গায় খোয়া রেখে গেছে ঠিকাদারের লোকজন। তাও নিম্নমানের এবং ব্যবহার অনুপযোগী বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সড়কে চলাচলকারীরা বলছেন, এ সড়কে মোটরসাইকেলে চলাচল করলে ঝাঁকুনিতে সুস্থ মানুষের কোমড় ব্যথা হয়ে যায়। এই সড়কের অটোচালক সদর ইউনিয়নের চর যমুনা গ্রামের রনি খা বলেন, ‘অনেকদিন ধরে রাস্তাটা (সড়ক) এভাবে পড়ে আছে। খোয়া বেছানো এই রাস্তার জায়গায় জায়গায় খানাখন্দ। গাড়ি চালাতে খুবই কষ্ট হয়। কেউ এসব চোখে দেখে না।’

একই ইউয়িনের পশুরবুনিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে খালগোড়া, পশুরবুনিয়া, সেনের হাওলা, চর যমুনা ও গঙ্গিপাড়া গ্রামের মানুষ চলাচল করে। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে সড়ক নির্মাণকাজ বন্ধ। তাই প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওইসব এলাকার মানুষের। খোয়ার মান ভালো না হওয়ায় রোলারে খোয়া গুঁড়া হয়ে গেছে। এখন বাতাসে বালু ও খোয়ার গুঁড়া উড়ছে। ধুলার দাপটে ভোগান্তিতে থাকেন সড়কের চলাচলকারীরা।’

এই সড়ক নির্মাণকাজের তদারকিতে থাকা এলজিইডির সার্ভেয়ার সোহরাব হোসেন বলেন, ‘ঠিকাদার এত দিন করেনি, এখন মনে হয় এখন কাজ শুরু করবে। ঠিকাদারের সঙ্গে আলাপ করছি, সে বলছে কাজ শুরু করবে। এখন ভিটুমিন ও পাথরের দাম বাড়তি অনেক। এখন ঠিকাদাররা বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সময় বাড়ায়।’ সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আলী আশরাফের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. মিজানুল কবির বলেন, ‘সড়ক নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে টেন্ডারের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি লিখেছিলাম। পরে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুনরায় কাজ করবে বলে আশ্বাস দেন। আশা করছি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্রুত সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘সড়কটি নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুবার সময় বাড়িয়েছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close