নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ অক্টোবর, ২০২২

জ্বালানিতে নতুন সম্ভাবনা

দেশে জ্বালানির উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) নির্ভর। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আকাশছোঁয়া দামের কারণে এলএনজির স্পট মার্কেট থেকে সরে আসায় বাড়তে থাকে জ্বালানি ঘাটতি। দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে দিনে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহের সক্ষমতা থাকলেও মিলছে অর্ধেকেরও কম। এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সারা দেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের। তবে সরকার মনে করছে, জ্বালানি সংকটের তীব্রতা কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শীতকাল পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে। পাশাপাশি সরকারের পরিকল্পনায় ছিল দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় চলতি বছর কাতার থেকে এলএনজি আমদানি বাড়ানো। সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করে একাধিক মন্ত্রণালয়।

মার্চ মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কাতারে বৈঠক করেন দেশটির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে। সম্প্রতি দেনদরবার করে এসেছে জ্বালানি সচিব, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানসহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। এসব দেনদরবারে বছরে সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৮ থেকে সর্বোচ্চ আড়াই মিলিয়ন টন এলএনজি দিচ্ছে কাতার।

দেশটির আশ্বাস, চুক্তির সর্বোচ্চ পরিমাণই পাবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া দেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আরো বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে লজিস্টিক ও কারিগরি সহযোগিতা করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে শতকরা ৪৪ ভাগ আসছে বেসরকারি খাত থেকে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটিই বেসরকারি খাতের।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে বেসরকারি খাতে ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করা হয়েছে। মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপ্রারিটি প্ল্যান জিইএস ইনটিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানের আওতায় ক্লিন এনার্জিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন উৎসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৯টি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, বিশ্বব্যাপী এলএনজি চাহিদা ও দাম ঊর্ধ্বমুখীর মধ্যেও কাতার সর্বোচ্চ পরিমাণে সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। আমরা তাদের কাছে সরবরাহ বৃদ্ধির আরো প্রস্তাব দিলে সায় পাওয়া গেছে। কাতারের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি রয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে ১ দমমিক ৮ মিলিয়ন টনের নিচে হবে না, আবার ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টনের ওপরে যাবে না। যদিও কাতার ২০২৫ সাল থেকে বর্ধিত এলএনজি সরবরাহ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

নাজমুল আহসান বলেন, আমাদের দুটি ভাসমান টার্মিনাল ও পুনরায় গ্যাসে রূপান্তরকরণ ইউনিট (এফএসআরইউ) রয়েছে। এ দুটির দৈনিক সরবরাহ সক্ষমতা রয়েছে ১ হাজার মিলিয়ন ঘটফুট। সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশ ব্যবহার করা যাবে। কাতার থেকে আরো ২ মিলিয়ন টন (বছরে) যুক্ত হলেও সমস্যা হবে না। আমাদের দুটি এফএসআরইউ দিয়ে বছরে ৬ মিলিয়ন টন পর্যন্ত সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া আরো একটি এফএসআরইউ স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সামিট গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তৃতীয় এফএসআরইউ হলে দৈনিক ১৫০০ মিলিয়ন আমদানির সক্ষমতা হবে।

জ্বালানি ঘাটতির মধ্যে নতুন এ সম্ভাবনাকে স্বস্তিদায়ক বলেই মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম। তার মতে, আমাদের বর্তমান সরবরাহ যেখানে আছে সেখানে রাখতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন বাড়াতে হবে। যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি, তবে আমদানি ও আমাদের নিজেদের উৎপাদন মিলিয়ে যে দাম পড়বে, সেটা খুব একটা বেশি হবে না। কিন্তু আমাদের নিজেদের উৎপাদন কমে গিয়ে আমদানি বেড়ে গেলে সার্বিক দামের ওপর একটা প্রভাব পড়বে। তখন গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। অথবা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে কাতারের বাইরে ওমানের সঙ্গে বছরে এলএনজি আমদানি হচ্ছে এক মিলিয়ন টন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close