নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ অক্টোবর, ২০২২

ছোলা মুড়ির দোকানে ব্যবহৃত কাগজে স্বাস্থ্যঝুঁকি

খবরের কাগজ, ছাপা কাগজ বা লিখিত কাগজের ঠোঙা বা এসব কাগজে মোড়ানো খাবার নিয়মিত খেলে, মানবদেহে ক্যানসার, হৃদরোগ ও কিডনি রোগসহ নানা রোগের সৃষ্টি হতে পারে। মোড়ে মোড়ে ঝালমুড়ি, ফুচকা, জিলাপি, পরোটা, পুরি, শিঙাড়া বা এই ধরনের খাবার পরিবেশন বা পরিবহনে যে মোড়কগুলো ব্যবহার করা হয়- তার সবই জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর মধ্যে পলিথিনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা থাকলেও ব্যবহৃত কাগজের মোড়ক নিয়ে কারো মধ্যে ভাবান্তর নেই।

পুরোনো কাগজ প্রধানত কেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়। এরপর তা যায় মোড়ক তৈরির কারখানায়। সেখান থেকে তা আবার আসে বাজারে। এরপর কেজি বা শ হিসেবে তা কিনে নিয়ে আসা হয়। এই তৈরি ও পরিবহনের সময় এগুলোতে জীবাণুতে সংক্রমণ হতে পারে। এগুলো প্রিন্ট করার সময় যেসব রং ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর বিপত্তি তো আছেই।

রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করছে এক দোকানে। বেচাকেনা হচ্ছে দেদার। কোনো ক্রেতা মুড়ি নিচ্ছেন প্লেটে, কেউ বা কাগজের মোড়কে। সেই মোড়ক তৈরি হয়েছে মূলত বইয়ের পাতা ব্যবহার করে। সেই বইয়ের কাগজে এমন সব রং ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে যা মানুষের পেটে গেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আবার মানুষের হাত থেকেও জীবাণু সংক্রমিত হয়েছে, সেটি বইপড়ার সময় আবার মোড়ক বানানোর সময়ও। কিন্তু না ক্রেতা, না বিক্রেতা, কারো মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে এতটুকু ভাবান্তর দেখা গেল না।

ঝালমুড়ি বিক্রেতা মাসুম মিয়া আসলে জানেনই না যে, এই কাগজ থেকে রোগ ছড়াতে পারে। পাশেই খাজা বিক্রি করছিলেন এক নারী। তারও ধারণা ছিল না ব্যবহৃত কাগজে খাদ্য বিক্রির বিপদ সম্পর্কে। বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তিনি বলেন, ‘এই কাগজে যে ক্ষতি অয় তা তো জানতামই না।’ এখন তো জানলেন, তাহলে কী করবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এহন থেইকা প্লেটে দিমু।’

ওনার কাছ থেকেই খাজা কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন আনিস রহমান। তিনি বলেন, ‘জানি এগুলো ক্ষতিকর। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এভাবেই নেই। শিশুরা পছন্দ করে। তবে এরপর সতর্ক হব।’

পরোটা পরিবহনের ক্ষেত্রে বিক্রেতারা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের পাশাপাশি প্রধানত খবরের কাগজ কেটে তা দিয়ে খাদ্যপণ্যটি মুড়িয়ে দেন। অনেক সময়ই দেখা যায় গরম পরোটায় কাগজের অক্ষর লেপ্টে গেছে।

তেজগাঁওয়ের একটি খাবার হোটেলে কাগজে মুড়িয়ে মোগলাই পরোটা বিক্রি করছিলেন রায়হান। তিনিও বলেন, ‘এভাবেই বিক্রি করব। আর তো কিছু করার নেই।’

বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থার ভূমিকাও একেবারেই দায়সারা গোছের। প্রায় এক দশক আগে করা আইনে এভাবে খাবার মোড়কজাত করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করা হলেও এর প্রচারেও নেই দৃশ্যমান উদ্যোগ।

তবে সম্প্রতি পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভোক্তা এবং বিক্রেতাদের সাবধান করা হয়েছে। এই ব্যবহৃত কাগজের রং ও রাসায়নিক মানব স্বাস্থ্যের কী কী ক্ষতি করতে পারে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি কয়জন মানুষের হাতে পৌঁছে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

এ বিষয়ে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এনামুল করিম বলেন, ‘যখন এই কাগজ প্রস্তুত হয়, এতে ক্লোরাইড, ডলোমাইড, হাইড্রোফ্লোরিস অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম অক্সাইড, সোডিয়াম সালফেট থাকে। আবার এগুলোতে যখন ছাপার জন্য কালি ব্যবহার করা হয়, তাতে যে উপাদান যেমন ক্যাডমিয়াম, কপার, জিংক, রং, পিগমেন্ট ও প্রিজারভেটিভস থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ ছাড়া পুরোনো কাগজে রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবও থাকে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। আবার এই কাগজগুলো যেসব জায়গা থেকে আসে সেখানেও জমে থাকতে পারে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু। তাই এগুলো পরিহার করা জরুরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close