প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
প্রকৃতিতে এক টুকরো স্বর্গ...
প্রাচ্যের ভেনিস বলা হয় বরিশালকে। আর সেই ভেনিসের বুকে কীর্তনখোলা নদীর কোল ঘেঁষে দক্ষিণের শ্রেষ্ঠবিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ যেন তার মাথার উপরে এসে ছুঁই ছুঁই করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিতে যেন স্বর্গীয় সৌন্দর্য তারার মতো জ্বলজ্বল করে। ক্ষীণ আলোয় তার দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলার বুকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কজুড়ে রয়েছে শত শত কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুল বৃক্ষের সারি। সবুজে ঘেরা এ মহাসড়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ সড়কের দুপাশে টংয়ের দোকান শিক্ষার্থীদের আড্ডার অন্যতম জায়গা। মহাসড়কটিতে হাঁটতে হাঁটতে কানে ভেসে আসবে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। মনে হবে গ্রাম বাংলার কোনো এক মেঠোপথ দিয়ে হাঁটছি। দুপাশে সবুজের সমারোহ সৌন্দর্যের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যানজট কোলাহলমুক্ত এ সড়কে শিক্ষার্থীরা মাঝে মাঝেই তাদের অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করতে আসেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী ভোলা রোড তার স্বপ্নের অপূর্ণতা ও এর সৌন্দর্য উপলব্ধি থেকে লিখেছেন- “আমার কাছে ‘ভোলা রোড’ বৃষ্টির দিনে স্বর্গের মতো লাগে। শুধু অপূর্ণ ইচ্ছা রয়ে গেছে, হালকা বৃষ্টি বা ঝুম বৃষ্টির পরে ওই রাস্তায় সাইকেল চালানো। সাইকেল পাই তো মানুষ পাই না। আবার যখন কেউ বলে আসো তখন আবার বৃষ্টি হয় না।”
কয়েকটি তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়ের মতো চিকন একটি সরু রাস্তা। ঘাস গজিয়েছে। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সীমানা ঘেঁষা আঁকাবাঁকা ছোট একটি খাল। আর এখানেই সারি সারি শিক্ষার্থীরা কখনো কখনো গোল হয়ে বসে তাদের আচরন স্কুলের পাঠ রপ্ত করে। কেউ কেউ ক্লান্তি কাটাতে বিকালের সূর্যের আলো থেকে নিজেকে আড়াল করতে আসে। ভাদ্রের পাকা তাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে, শ্রাবণেই সব তাল নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার গল্পও রয়েছে। দলবেঁধে তালতলায় আড্ডা। বান্ধবীর হাতের জঘন্য রান্না খেয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা রাঁধুনীর তকমা দেওয়া হয় এই তালতলায়। এখানে বসলে মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তালগাছ’ কবিতাটি।
সাহিত্যিক বনে যেতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরগুলো ঘুরে দেখুন, সেখানে বসুন, সেখানে লেখা সাহিত্যিক টার্মগুলোয় আপনার চোখগুলো বুলিয়ে নিন। দীর্ঘ ১০ বছরের এই চত্বরে অনেক শিক্ষার্থী তাদের গল্প কুঁড়িয়ে নিতে আসে, তাদের স্মৃতির অন্দরমহল থেকে জিজ্ঞেস করতে আসে- ‘এখন তুমি কার দখলে?’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনের ইতি ঘটে। উচ্চশিক্ষিত হিসেবে সনদের পাশাপাশি মেলে শিক্ষার বাস্তবিক জ্ঞান। বন্ধু কিংবা জীবনসঙ্গীর দেখা মেলে শেষ বিদ্যাপীঠ থেকে। এ যে কোনো পাপ নয়। এ যে স্বর্গীয় আবেগের বহিঃপ্রকাশ। আর এই আবেগের এককোন জুড়ে থাকে চত্বরের স্মৃতি। কারো প্রেমের পুরোটা দখল করে রাখে এই চত্বর।
আঁকাবাঁকা পথ, উঁচুনিচু জোড়া ব্রিজ, দুইপাশে দুই সর্পিল নদী, চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য অপার হয়ে বসে আছে। প্রকৃতির আরো কত অভূতপূর্ব দৃশ্য চোখের সামনে উপস্থিত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দপদপিয়া পার হলেই প্রকৃতির এই স্বর্গরাজ্যের দেখা মেলে। এই রাজ্যে সবাই যেন রাজা। প্রকৃতিকে তারা শাসন করে। এই রাজ্যেকে আরো সুন্দর করে তুলেছে কাপল রোড ও লন্ডন ব্রিজ। চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর থেকে নেওয়া।
"