তহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ভাবনায় এখন শিক্ষা সমাপনী উৎসব
* জাকসু ভবন প্রতিদিনই সরগরম * বিকাল থেকেই ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আগমন * গিটার নিয়ে বসে গানের আসর অথবা চলে গল্প-গুজব
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ভবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র লাগোয়া এক তলাবিশিষ্ট ভবনটি জাকসু ভবন নামেই সমধিক পরিচিত। ছোট্ট এই ভবন এখন প্রতিদিনই সরগরম হয়ে উঠছে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল থেকেই ভবনের কয়েকটি কক্ষ ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে।
এখানে কখনো গিটার নিয়ে বসে গানের আসর। কখনোবা গল্প-গুজবে মেতে উঠেন শিক্ষার্থীরা। আর যাদের এসবে আগ্রহ নেই, তারাও মাঝেমধ্যে ঢুঁ মেরে যান কক্ষগুলোতে। এভাবেই চলছে। উপলক্ষ শিক্ষা সমাপনী উৎসব। উৎসবের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। তাতে কী? উৎসবের আমেজ হয়তো এখনি পেতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। আর তাই জাকসু ভবনে ভিড় বাড়ছে ক্রমেই। একই সঙ্গে দিন যত এগিয়ে চলছে, উৎসব নিয়ে নানা ভাবনা ডালপালা মেলছে তাদের মনে। কেমন হবে এবারের শিক্ষা সমাপনী উৎসব? আর কবে নাগাদইবা হতে পারে? শিক্ষা সমাপনী উৎসব নিয়ে এমন নানা ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা জানার চেষ্টায় এই ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রতিদিনের সংবাদ।
রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী ফারশাদ হোসেইন আবিরের। এর পরও সময় পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে চলে আসেন জাকসু ভবনে। গত মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতেও বাইক নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে জাকসু ভবনে আসেন তিনি। একপর্যায়ে পাশের টং দোকানে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জানালেন শিক্ষা সমাপনী উৎসব ঘিরে তার ভাবনা। বললেন, ‘অবশ্যই চাইব চমৎকার একটা আয়োজন হোক এবং এই শীতেই হোক সেটা। সবাই এই উৎসবের অপেক্ষাতেই আছি। এজন্য জাকসুতে কিন্তু দিন দিন ভিড় বাড়ছে। কার্যক্রম শুরু হলে এই ভিড় আরো বাড়বে। তবে বেশি তাড়াহুড়ো যেন না করে ফেলি, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যেহেতু এটার সঙ্গে পুরো ব্যাচের আবেগ জড়িত, একটু সময় নিয়ে হলেও সবাই মিলে স্মরণীয় কিছুই করি।’
শিক্ষা সমাপনী উৎসব নিয়ে উন্মাদনার শেষ নেই গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আ ফ ম এফরান হাসানের (শোভন)। জাকসু ভবনে দিনের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করেন তিনি। গত বুধবারও (২৮ সেপ্টেম্বর) ব্যতিক্রম হয়নি। রাতে জাকসু ভবনে গিয়ে পাওয়া গেল তাকে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার এক ফাঁকে বললেন, ‘শিক্ষা সমাপনী উৎসব আমাদের আবেগের সঙ্গে মিশে আছে। এ সময় আমাদের পড়ার টেবিলে থাকার কথা, তার পরও আমরা এখানে আসি। এজন্য আমি চাই, শিক্ষা সমাপনী উৎসব তাড়াতাড়ি হয়ে যাক। এমনিতেই করোনার কারণে দেরি হয়ে গেছে। সমাবর্তন যদি ফেব্রুয়ারিতে হয়, তবে তার আগেই আমাদের উৎসব হয়ে যাক। আর সেটা না হলে মার্চেই করে ফেলতে হবে।’
বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই জাকসু ভবনে আসেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহান সাদিক রিদম। তার প্রত্যাশা, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই হবে শিক্ষা সমাপনী উৎসব। শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এই শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে খুদেবার্তার মাধ্যমে বলেন, ‘শিক্ষা সমাপনী উৎসব ঘিরে ইতোমধ্যে জাকসু ভবন সরগরম হয়ে উঠেছে। আশা করি, অক্টোবরের শুরুতেই আহ্বায়ক ও কোষাধ্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে। এরপর রাজা-রানি নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা একটা জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব করতে পারব বলে আশা রাখি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে এরই মধ্যে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম জয়। তবু সুযোগ পেলে জাকসু ভবনে আসতে ভোলেন না তিনি। গত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) কর্মস্থল ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স থেকে ক্ষণিকের ছুটি পেয়ে চলে আসেন জাকসু ভবনে। এই শিক্ষার্থীর ভাষায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্বের শেষপর্যায়ে এটাই শেষ সুযোগ পাচ্ছি, এভাবে একসঙ্গে আনন্দ করার। এজন্য ব্যস্ততার মাঝে সময় পেলেই ক্যাম্পাসে চলে আসি। এই সময়টা তো আর কখনো ফেরত পাওয়া যাবে না। তাছাড়া শিক্ষা সমাপনী উৎসব কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে জাকসুতে একটা উৎসবের আমেজ চলে এসেছে। এজন্য এখানে এলে দারুণ একটা সময় কাটাতে পারি। আমি চাই, সবাই এই সুযোগ গ্রহণ করুন। সবাই বাঁধভাঙা উল্লাসে ক্যাম্পাস মুখরিত করে একসঙ্গে বিদায় নিই।’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী। স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। এরপরও শিক্ষা সমাপনী উৎসবের গতিপ্রকৃতির নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রতিদিনের সংবাদকে জানালেন উৎসব নিয়ে তার প্রত্যাশার কথা। বললেন, সৃজনশীল আয়োজনের মাধ্যমে সবার প্রসংশা কুড়াতে পারে- এমন উৎসব চান তিনি। মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, প্রতিটি ব্যাচ শিক্ষা সমাপনী উৎসব করে। এর আগে ৪২ ব্যাচ করেছে। এখন আমাদের করতে হবে। শিক্ষাজীবন শেষে যে প্রোগ্রামটা হয়, সেটা যেন সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে করা যায় সেটা চাই। প্রোগ্রামটা যেন সবার প্রশংসা কুড়ায়। কেউ যেন সমালোচনা না করতে পারে।
"