মো. গোলাম রসুল, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

রাবেয়াদের চলাচলে ভরসা বাঁশের সাঁকো

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অসহায় রাবেয়া বেগমের পরিবারের চলাচলের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। ১০ বছর ধরে এই সাঁকো দিয়েই চলছে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চলাচল। বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় দীর্ঘদিন থেকেই তিনি সাঁকো দিয়ে চলাচল করে আসছেন।

জানা গেছে, উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের পূর্ব ডেকরা গ্রামের কাজিবাড়ির রাবেয়া বেগম ১২ বছর আগে পরিবার নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে একটি নতুন বাড়ি করেন। কিন্তু বাড়ির রাস্তা না থাকায় কিছুদিন একই গ্রামের প্রতিবেশী বাচ্ছু মিয়ার জায়গার ওপর দিয়ে চলাচল করতেন। পরে তাদের সঙ্গে রাবেয়া বেগমের পর্রিবারের বনিবনা না হওয়ায় বাচ্ছু মিয়া নিজের জায়গায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে রাস্তা বন্ধ করে দেন। পরবর্তী সময়ে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে রাবেয়া বেগম একই প্রতিবেশী ফয়েজ আহমেদের নিচু জমির ওপর ১৭ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছেন। বর্তমানে এই সাঁকোর খুবই নড়েবড়ে অবস্থা।

রাবেয়া বেগমের চলাচলের সাঁকোটি দেখতে তার বাড়িতে যান এই প্রতিবেদক। পরিবারের ১৫ জন সদস্য এই সাঁকো দিয়েই চলাচল করেন। সাঁকোটি পুরোনো ও নড়বড়ে হওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে এটি ভেঙে যেতে পারে।

ভুক্তভোগী রাবেয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমার স্বামী কামাল হোসেন আমার ও ছেলেমেয়েদের কোনো খোঁজ খবর রাখেন না। তাই বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে পূর্ব ডেকরার আঞ্চলিক সড়ক থেকে কিছুটা দূরে বাড়ি করি। কিন্তু বাড়ির রাস্তা না থাকায় ছেলেমেয়ে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছি। বর্ষা মৌসুমে নিচু জমিগুলোতে কোমর সমান পানি হয়ে যায়। তখন এই অপ্রশস্ত সাঁকোতে চলাচল করতে অত্যন্ত কষ্ট হয়। অন্যের জমির ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে বাড়ি থেকে বাইরে যাতায়াত করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘কোনো বিপদণ্ডআপদে কাউকে কাছে পাওয়া যায় না। একবার আমার ছোট মেয়ে অসুস্থ হলে গ্রাম্য ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়। রাস্তা না থাকায় তিনি বাড়িতে আসেননি। কী আর করব। বাধ্য হয়ে নিজের অসুস্থ মেয়েকে কাঁধে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই। বর্তমানে সাঁকোর অবস্থা তেমন একটা ভালো না। তাই বাধ্য হয়ে অনেক ধার-দেনা করে জমির মালিক মো. ফয়েজকে ১ গন্ডা রাস্তার জন্য ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। তিনি আমাকে এখানো রাস্তা করার জন্য জায়গা বুঝিয়ে দেননি।’

করফুলের নেছা নামে এক নারী বলেন, চলাচলের জন্য সবার রাস্তা আছে। কিন্তু এই অসহায় পরিবারটির কোনো রাস্তা নেই। তাদের বাড়ির বাইরে আসা-যাওয়ায় অনেক কষ্ট হয়। প্রতিবেশী মো. নুরুল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে দেখছি তারা একটি বাঁশের পুল দিয়ে আসছেন।

আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘চেয়ারম্যান হিসেবে মাত্র দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। রাবেয়া বেগমের পরিবারে জন্য রাস্তা করতে যত ধরনের সহযোগিতা লাগে আমি করব।’

এ বিষয়ে প্রতিবেশী বাচ্ছু মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান। তিনি বা তার পরিবারের কেউ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close