নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মৎস্য খাতে দাদন প্রথা বন্ধের তাগিদ

জেলে ও সামুদ্রিক খাদ্য সেক্টরের শ্রমিকদের অবস্থা বিষয়ক আঞ্চলিক গবেষণা প্রতিবেদনে মৎস্য খাতে দাসত্বের দাদন (শর্তযুক্ত ঋণ) প্রথা বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সামুদ্রিক খাদ্য সেক্টরের বৈশি^ক ভ্যালু চেইনে ন্যায্যমূল্য ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত, অন্যায্য ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধে যথাযথ আইন প্রণয়ন ও আইনের ব্যবহার নিশ্চিত, ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী বা জেলে ও শ্রমিকদের শোষণ বন্ধ এবং চিংড়িচাষিদের জন্য লাভজনক ন্যূনতম মূল্য ঘোষণা ও মূল্য সহায়তা প্রদানের সুপারিশও করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সাউথ এশিয়ান অ্যালায়েন্স ফর পোভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি), বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, ইনসিডিন বাংলাদেশ ও জন-উদ্যোগ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন স্যাপি সচিবালয় নেপাল থেকে আগত অ্যাডভোকেসি ও মনিটরিং অফিসার রেশমা সায়কা ও গবেষক মো. শহিদুল্লাহ। বিএনপিএসর উপপরিচালক ও স্যাপির কোর কমিটির সদস্য শাহনাজ সুমীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা করেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মোবিলাইজেশন এক্সপার্ট ড. সৈয়দ আলী আজহার, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক কে এম মুসতাক আলী, অ্যাডভোকেট মলয় ভৌমিক, মাছ ব্যবসায়ী এম জাহাঙ্গীর, নূরুল ইসলাম ও সাবিহা ইয়াসমিন।

অনুষ্ঠানে গবেষণা তথ্য তুলে ধরে স্যাপির অ্যাডভোকেসি ও মনিটরিং অফিসার রেশমা সায়কা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মুনাফাতাড়িত রপ্তানিনির্ভর সামুদ্রিক খাদ্যের ভ্যালু চেইনে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ঋণগ্রস্ততা ও বৈষম্য রয়েছে। বিশেষভাবে জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য অনেক বেশি। সামুদ্রিক খাদ্যের ভ্যালু চেইনে রপ্তানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নিয়োজিতরা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী। সেখানে বৈশি^ক ভ্যালু চেইনে ক্রিয়াশীল অ্যাক্টরদের ক্ষমতার অসমণ্ডবিন্যাসের কারণে মানুষের দুর্দশা পাকাপোক্ত হচ্ছে।

গবেষক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, অধিকাংশ মৎস্যজীবী-জেলে দরিদ্র, নিজেদের নৌকা বা জাল নেই। তারা কাজ করেন দৈনিক মজুর ভিত্তিতে। তারা সবসময় নৌকার মালিক বা মহাজনের কাছ থেকে আগাম ঋণ বা দাদন নিয়ে থাকেন। নৌকার মালিকের সঙ্গে জেলেদের কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্র থাকে না। তারা আগাম ঋণ বা দাদনের বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করেন। দাদনের কারণে জেলেরা মহাজন বা নৌকার মাালিকের কাছে জিম্মি থাকেন।

ড. সৈয়দ আলী আজহার বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধিত জেলেদের ক্ষতিপূরণ-সংক্রান্ত সরকারের নীতি অনুযায়ী মাছ ধরার সময় কোনো জেলে নিখোঁজ হলে বা মারা গেলে তার পরিবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে পঙ্গু ব্যক্তিদের জন্য সর্বোচ্চ এককালীন আর্থিক সহায়তা হিসেবে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রয়েছে; যা যথেষ্ট নয়। আবার সেই বিধান পুরোপুরি কার্যকরও নয়।

ট্রেড ইউনিয়ন নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ধ্বংসাত্মক উপায়ে অতি-আহরণ বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য খাতের একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে দুশরও বেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার এবং ৬৮ হাজারের মতো দেশীয় ইঞ্জিনচালিত নৌকা রয়েছে; যা উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় ধ্বংসাত্মক প্রযুক্তি ও কৌশল অবলম্বন করে বে-আইনিভাবে মৎস্য আহরণ করছে। তাই মৎস্য খাতের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

উন্নয়ন কর্মী কে এম মুস্তাক আলী বলেন, ২০০১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারের সংখ্যা তিনগুণের বেশি বেড়েছে। ওইসব ট্রলার বে-আইনিভাবে সাগরে মৎস্য আহরণ করছে; যা শুধু সামুদ্রিক বাস্তু সংস্থানেরই ক্ষতি করছে না, প্রচলিত পদ্ধতিতে মৎস্য আহরণকারী জেলে সম্প্রদায়ের জীবিকাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য শিকারি ট্রলার ইন্ডাস্ট্রি আনুষ্ঠানিক খাত হলেও তাদের কর্মপরিবেশ অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে নিয়োজিত অধিকাংশ শ্রমিক অস্থায়ী, যাদের চাকরির নিরাপত্তা নেই। মৌসুম শেষে চাকরি থাকে না। ওই শ্রমিকদের নেই নিয়োগপত্র, সার্ভিস বুক এবং পরিচয়পত্র বা আইডেনটি কার্ড। তাদের শুধু মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ইস্যু করা অনুমোদন কার্ড রয়েছে। এ খাতের শ্রমিকরা সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি থেকেও বঞ্চিত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close